**মলাশয়ের রক্ত পড়ার কারণসমূহ**
মলাশয়ের রক্তপাতের একাধিক সম্ভাব্য কারণ রয়েছে:
1. **হেমোরয়েডস**: মলদ্বারের ভেতরের শিরাগুলোর ফুলে যাওয়া হেমোরয়েডস রক্তপাতের একটি সাধারণ কারণ। এটি বয়সের সঙ্গে আরও সাধারণ হয়ে ওঠে এবং এর ফলে মলের মধ্যে উজ্জ্বল লাল রক্ত দেখা যায়। অন্যান্য লক্ষণ হিসেবে মলদ্বারে চুলকানি ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
2. **মলদ্বার ফিসার**: মলদ্বারে ছোট্ট ফাটল বা অ্যানাল ফিসার অনেক সময় মলত্যাগের সময় রক্তপাত ঘটায়। এর কারণে মলদ্বারে খিঁচুনি, চুলকানি ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে শক্ত মল বা ডায়রিয়ার কারণে।
3. **প্রদাহজনক অন্ত্র ব্যাধি**: এই অবস্থায় ইমিউন সিস্টেম অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে রক্তপাত ঘটে। পারিবারিক ইতিহাসও এই রোগের জন্য অবদান রাখতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, রক্তস্বল্পতা ও ওজন হ্রাস।
4. **সংক্রমণ**: অন্ত্রে সংক্রমণের কারণে আমাশয় হতে পারে, যা রক্তাক্ত ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। অন্যান্য লক্ষণ হিসেবে জ্বর, পেটব্যথা ও বমি হতে পারে।
5. **বিবিধ কারণ**: অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– স্ফীত কোলন
– স্ফীত পেটের আস্তরণ
– স্ফীত পাচনতন্ত্র
– স্ফীত মলদ্বার
– কোষ্ঠকাঠিন্য
**মলের মধ্যে রক্তের লক্ষণ**
মলের মধ্যে রক্তের প্রধান লক্ষণ হলো মলত্যাগের সময় বা পরে লাল বা মেরুন রঙের রক্ত দেখা। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
– **মলের রঙের পরিবর্তন**: রক্ত আংশিকভাবে হজম হলে মল কালো বা ট্যারি (মেলেনা) হতে পারে।
– **পেটে ব্যথা**: ডাইভার্টিকুলাইটিস বা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের কারণে পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্পিং বা অস্বস্তি হতে পারে।
– **অন্ত্রের অভ্যাসের পরিবর্তন**: মলের রক্ত ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
– **ক্লান্তি ও দুর্বলতা**: দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণের কারণে রক্তস্বল্পতা ঘটতে পারে, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণ।
– **ওজন কমানো**: কিছু জিআই সমস্যার কারণে অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস হতে পারে।
**মলের মধ্যে রক্ত নির্ণয়**
রক্তপাতের কারণ নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষা করা হতে পারে:
– **চিকিৎসা ইতিহাস**: রোগীর পূর্ববর্তী জিআই সমস্যা, ওষুধের ব্যবহার, খাদ্যাভ্যাস এবং পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়।
– **শারীরিক পরীক্ষা**: অর্শ্বরোগ, মলদ্বার ফিসার বা অন্যান্য সমস্যার লক্ষণ চিহ্নিত করতে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
– **মল বিশ্লেষণ**: মলের নমুনা সংগ্রহ করে রক্তের উপস্থিতি ও সংক্রমণের লক্ষণ পরীক্ষা করা হয়।
– **কোলোনোস্কোপি বা এন্ডোস্কোপি**: এই পদ্ধতিগুলো জিআই ট্র্যাক্ট পরিদর্শন করতে ব্যবহৃত হয় এবং রক্তপাতের উৎস শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
– **ইমেজিং টেস্ট**: এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই দিয়ে জিআই ট্র্যাক্ট এবং আশপাশের অঙ্গগুলোর অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়।
**চিকিৎসা**
1. **হেমোরয়েডস**:
– প্রচুর পানি পান করুন।
– ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।
– ভেজা ওয়াইপ ব্যবহার করুন।
– মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলুন।
2. **মলদ্বার ফিসার**:
– তরল পান করুন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য খান।
– ফাইবার পরিপূরক গ্রহণ করুন।
– উষ্ণ স্নান করুন।
– ব্যথা উপশমকারী ব্যবহার করুন।
3. **প্রদাহজনক অন্ত্র ব্যাধি**:
– প্রদাহবিরোধী ওষুধ ব্যবহার করুন।
– জৈবিক ওষুধ ও ইমিউনো-দমনকারী ওষুধ প্রয়োগ করুন।
– পুষ্টি অপ্টিমাইজ করুন।
4. **সংক্রমণ**:
– ওরাল রিহাইড্রেশন করুন।
– প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।
**প্রতিরোধ**
মলাশয়ের রক্তপাত প্রতিরোধে কিছু জীবনধারার পরিবর্তন কার্যকর হতে পারে:
– **উচ্চ ফাইবার ডায়েট**: ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান।
– **নরম খাবার**: ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকুন এবং নরম মল বজায় রাখুন।
– **নিয়মিত ব্যায়াম**: স্বাস্থ্যকর হজম উন্নীত করতে নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নিন।
– **স্ট্রেনিং এড়ানো**: মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ এড়িয়ে চলুন।
– **বার্ষিক চেকআপ**: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং করুন।
মলের মধ্যে রক্ত দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ), কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে.কমপ্লেক্স, লিফ্ট-৪, ঢাকা।
ফোন: ০১৭১২৯৬৫০০৯