গত বছরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডেঙ্গু ভাইরাস কেবল এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর জীবনচক্র আমাদের জানা।মশার বংশবিস্তার স্রেফ পরিষ্কার পানিতে হয়। তাই যদি আমরা সকলে মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি নিই, তাহলে এটি সম্ভব। সচেতনতা ডেঙ্গুকে নির্মূল করতে সাহায্য করবে। আমাদের উচিত এখনই বাড়ির মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করা।
ডেঙ্গু মৌসুমে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তা গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘরে বসে অপেক্ষা করা উচিত নয়। সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু নির্ণয় সম্ভব। তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, মেরুদন্ড ব্যথা, খাবারে অরুচি ও বমি ডেঙ্গুর লক্ষণ। সাধারণত, জ্বরের পর হঠাৎ কমে যাওয়ার পর পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনে আবার জ্বর ফিরে আসে এবং গায়ে লাল দানা ওঠে। তবে ডেঙ্গুর প্রকৃতি ও পরিণতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে এবং শিশু ও বয়স্করা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস বা স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
পরীক্ষা: জ্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে CBC এবং Dengue NS1 Ag পরীক্ষা করলেই রোগ ধরা পড়ে। পঞ্চম দিন থেকে CBC, Dengue IgM Ab, SGPT পরীক্ষা করতে হবে।
কী করবেন: আতঙ্কিত হবেন না। চিকিৎসক রোগের তীব্রতা অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। রক্তের কাউন্ট স্বাভাবিক থাকলে বিশ্রাম নিন। জ্বরে শরীর থেকে পানি বের হয়ে পানিশূন্যতা হতে পারে, তাই প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ করুন। জ্বর কমাতে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন। ব্যথানাশক ওষুধ যেমন clofenac, diclofenac ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি অনুচক্রিকার ক্ষতি করতে পারে।
হাসপাতালে কখন ভর্তি হবেন: প্রতিদিন রক্তের CBC পরীক্ষা করুন। যদি অনুচক্রিকা হ্রাস পায়, রক্তচাপ কমে যায়, বা মুখে কিছু খেতে না পারেন তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তবে যদি অনুচক্রিকা ধীরগতিতে কমে, বাড়িতে বসে প্রতিদিন CBC করতে হবে এবং অনুচক্রিকা বাড়লে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
হৃদরোগীরা কী করবেন: হৃদরোগীরা যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন, তবে রক্ত পাতলা করার ওষুধ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। ডাক্তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলুন এবং অনুচক্রিকা স্বাভাবিক হলে পুনরায় ওষুধ শুরু করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিউরের ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। ডেঙ্গুতে লিভার আক্রান্ত হলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধও বন্ধ রাখতে হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার ওঠানামা হতে পারে, তাই ওষুধ বা ইনসুলিন নেওয়ার আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করে ডোজ অ্যাডজাস্ট করুন।
সচেতনতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করুন। মনে রাখবেন, প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সর্বদা উত্তম।
লেখক: সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।