**স্লিম হওয়ার সার্জিক্যাল উপায়: লাইপোসাকশন**
অনেকের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে গিয়ে বিশেষ করে তলপেটে উঁচু হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে সার্জিক্যাল পদ্ধতি বা লাইপোসাকশন কার্যকরী হতে পারে। অস্টিওপ্লাস্টি বা বডি শেপিং হিসেবেও পরিচিত এই পদ্ধতি মূলত অতিরিক্ত চর্বি অপসারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত, ওজন কমানোর জন্য ডায়েটিং ও এক্সারসাইজ করা হয়, কিন্তু অনেকেই সার্জিক্যাল অপারেশন দ্বারা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পছন্দ করেন। লাইপোসাকশন পদ্ধতিতে, শরীরের যে অংশ থেকে চর্বি অপসারণ করতে হয়, সেখানে আধা ইঞ্চি পদ্ধতির মাধ্যমে একটি সরু নল প্রবেশ করিয়ে চর্বি টেনে বের করা হয়। অপারেশনটি ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় নেবে এবং এতে ৩ থেকে ৫ কেজি চর্বি অপসারণ করা যায় (চর্বির উপস্থিতি অনুযায়ী)। অপারেশনের পর ৩ দিন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন এবং অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না।
**লাইপোসাকশন পদ্ধতি সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর:**
1. **লাইপোসাকশন পদ্ধতি কী?**
এটি স্কিনের নিচের চর্বি মেশিনের মাধ্যমে টেনে বের করার পদ্ধতি।
2. **টি এল লাইপোসাকশন কী?**
এটি টিউমেসসেন্ট লোকাল লাইপোসাকসনকে বোঝায়, যেখানে অপারেশনের স্থান অবশ করার জন্য ওষুধ দিয়ে ফুলিয়ে ফেলা হয়।
3. **অপারেশনের সময় ব্যথা হয় কি?**
অপারেশনের সময় ব্যথা হয় না, তবে পরে সামান্য ব্যথা হতে পারে, যা পেইন কিলার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
4. **সাইড এফেক্ট আছে কি?**
সাইড এফেক্ট খুবই কম, তবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
5. **শরীরের কোথায় কোথায় করা যায়?**
পেট, কোমর, ব্রেস্ট, থাই, আর্ম (হাত)।
6. **অজ্ঞান করতে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কিনা?**
অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনও হয় না। রোগী অপারেশনের পর নিজেই বাসায় চলে যেতে পারেন।
7. **বিশ্রামে থাকতে হয় কিনা?**
অপারেশনের পর ১ দিন পূর্ণ বিশ্রাম এবং পরবর্তী ২ দিন ঘরেই হাঁটাচলা করা যাবে। ৪র্থ দিন থেকে স্বাভাবিক কাজ শুরু করা যায় এবং ১০ দিন পর থেকে ভারী কাজও করা যেতে পারে।
8. **লাইপোসাকশনের সঙ্গে সঙ্গে কি অপারেশনের স্থান স্লিম হয়ে যাবে?**
অপারেশনের পর স্থানটি স্লিম হতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগতে পারে।
9. **কত কেজি চর্বি বের করা হয়?**
সাধারণত ১/২ থেকে ৫ লিটার পর্যন্ত চর্বি বের করা যায়।
10. **কত কেজি ওজন কমবে?**
বের করা চর্বির দ্বিগুণ ওজন কমানো সম্ভব, তবে লাইপোসাকশন একমাত্র ওজন কমানোর পদ্ধতি নয়।
11. **চর্বি পুনরায় জমা হতে পারে কি?**
যদি ওজন বাড়ানো না হয়, তবে নতুন করে চর্বি জমার সম্ভাবনা নেই।
12. **ওজন নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?**
ডায়েটিং ও এক্সারসাইজ ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
13. **প্রেগনেন্ট হতে অসুবিধা হবে কি?**
প্রেগনেন্ট হতে কোনো অসুবিধা হবে না।
14. **ব্রেস্ট ফিডিংয়ে সমস্যা হবে কি?**
লাইপোসাকশন শুধুমাত্র ফ্যাট কমায়, গ্ল্যান্ড কমায় না; তাই ব্রেস্ট ফিডিংয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
15. **কোনো বয়সের সীমা আছে কি?**
১৬ থেকে ৭০ বছর বয়সীরা লাইপোসাকশন করাতে পারেন। অপারেশনের পর স্কিন ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
16. **লাইপোসাকশনের পর ছিদ্রগুলোর কী হবে?**
ছিদ্রগুলো মিলিয়ে যাবে অথবা ছোট দাগ থাকতে পারে।
**লাইপোসাকশনের পর করণীয়:**
1. প্রচুর তরল খাবার পান।
2. একদিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন।
3. পরবর্তী ২ দিন বাসায় হাঁটাচলা করুন।
4. ৪র্থ দিন থেকে স্বাভাবিক কাজ শুরু করুন।
5. ১০ দিন পর থেকে ভারী কাজও করতে পারেন।
6. প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
7. শোয়া অবস্থায় ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করুন
8.অপারেশনের পর ২ দিন ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
**অপারেশনের পূর্বে যা করতে হবে:**
1. অপারেশনের জন্য যথাসময়ে আসতে হবে।
2. ভরা পেটে অপারেশন করা হয়।
3. ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরিধান করুন।
4. অতিরিক্ত ১ সেট কাপড় সংগ্রহে রাখুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক (সাবেক) চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চিফ কনসাল্ট্যান্ট, কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রাল গ্র্যান্ড, দ্বিতীয় তলা, গ্রীন রোড, ফার্মগেট, ঢাকা।