আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা আইএআরসি অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং মারা যান ছয় হাজারের বেশি। নারীদের মধ্যে ১৯% এবং নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৮.৩% ক্যান্সার রোগী স্তন ক্যান্সারে ভোগেন। দেশে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার ক্যান্সার হলো স্তন ক্যান্সার।
স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে অতিরিক্ত কোষগুলো টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। এই পিণ্ড রক্তনালী ও লসিকা মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য।
কোনো নারীই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি বাংলাদেশে পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সার শনাক্ত হচ্ছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা হলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই নিয়মিতভাবে বাড়িতে নিজের স্তন পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ২০ বছর বয়স থেকেই এই পরীক্ষা শুরু করা উচিত।
**ঝুঁকির কারণসমূহ:**
– পরিবারের মায়ের দিকের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে স্তন ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বেশি।
– ১২ বছর বয়সের পরে মাসিক শুরু হওয়া এবং ৫৫ বছর বয়সের পরেও মেনোপজ না হওয়া স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
– পোস্ট মেনোপোজাল সিনড্রোমের চিকিৎসায় পাঁচ বছরের বেশি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করলে ঝুঁকি বাড়ে।
– ৩০ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো এবং জিনগত মিউটেশন স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
– নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, স্থূলতা, ধূমপান ও মদ্যপানও ঝুঁকি বাড়ায়।
**উপসর্গ:**
– স্তনের চারপাশে বা বগলে ফুলে যাওয়া বা শক্ত চাকার মতো অনুভূত হওয়া।
– স্তনের কোনো অংশ ফোলা বা ব্যথা হওয়া, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা রঙ ও আকৃতির পরিবর্তন হওয়া।
– দুই স্তনের আকারের পরিবর্তন, স্তনের আশপাশে লাল হয়ে যাওয়া।
– স্তনের কোনো অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া অথবা বোঁটা দিয়ে রস বের হওয়া।
**নির্ণয়:**
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য প্রধানত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে:
1. ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্সরে, যা স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে।
2. স্তনে পিণ্ড আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।
3. নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা বোন স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা জানা যায়।
**চিকিৎসা:**
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা ক্যান্সারের ধরন ও আকার, এবং এটি স্তনে সীমাবদ্ধ আছে কিনা তা বিবেচনায় নিয়ে করা হয়। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:
– লাম্পেকটোমি (স্তন থেকে টিউমার অপসারণ)
– মাস্টেকটোমি (সম্পূর্ণ স্তন অপসারণ)
– রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি।
মানসিক স্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ, অনেক সময় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও প্রয়োজন হতে পারে। আধুনিক হোমিও চিকিৎসার সাফল্যও রয়েছে।
**ঝুঁকি কমানোর উপায়:**
– ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
– অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
– শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান।
– পোস্ট মেনোপোজাল হরমোন থেরাপি সীমিত রাখুন।
**লেখক:** সরদার হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসক, সরদার হোমিও হল ৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।