বিশ্বজুড়ে যেসব জীবাণু নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে, জিকা ভাইরাস সেসবের অন্যতম। বাংলাদেশে অবশ্য হরহামেশা জিকা ভাইরাস সংক্রমণের সংবাদ পাওয়া যায় না। তাতে নিশ্চিন্ত থাকার জো নেই। জিকা ভাইরাস এমন এক জীবাণু, যা সুস্থ একজনের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এ জীবাণুর সংক্রমণ হলে গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক গঠন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ভয়টা সেখানেই। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর যদি জিকা ভাইরাস সংক্রমণ হয়, তাহলে তাঁর গর্ভে বাড়তে থাকা শিশুটির মাথার আকার হতে পারে স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট। তাতে মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতার ব্যত্যয় ঘটবে। শিশুর মৃত্যুঝুঁকিও বাড়বে। বেঁচে থাকলেও হয়তো শিশুটি স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে পারবে না।
বাংলাদেশে সংক্রমণ
বাংলাদেশে ২০২৩ সালে শনাক্ত হওয়া জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচ ব্যক্তির নমুনা থেকে সম্প্রতি ভাইরাসটির জিনগত পরীক্ষা করা হয়েছে। জিকা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ থাকা ১৫২ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচ ব্যক্তির দেহে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এর মধ্যে তিনটি নমুনার হোল জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসের যে বৈশিষ্ট্যের কথা জানা গেছে, তাতেই বাড়ছে আশঙ্কা। শনাক্ত হওয়া ভাইরাসগুলো এশিয়ান ধরনের (এশিয়ান লিনিয়েজ)। এই ধরন স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম।
জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত যে পাঁচজনের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের আবাসস্থল খুব কাছাকাছি এলাকায় এবং তাঁরা সংক্রমিত হওয়ার আগে দুই বছরের মধ্যে দেশের বাইরে যাননি। নমুনাগুলো প্রায় এক মাসের মধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে ধারণা করা যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি ওই নির্দিষ্ট এলাকা থেকেই সংক্রমিত হয়েছিলেন। এমন ঘটনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় গুচ্ছ সংক্রমণ। এর অর্থ সেখানে আরও বহু মানুষ সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। ওই পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে একজনের দেহে আবার সেই একই সময়ে ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাসও পাওয়া গিয়েছিল। একই সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বর এবং জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা বাংলাদেশে এটিই প্রথম।
যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়
একজন সুস্থ ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে কোনো উপসর্গ না-ও দেখা দিতে পারে। মাত্র ২০ শতাংশের মতো রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয়। তা-ও কেবল জ্বর, মাথাব্যথা কিংবা পেশিব্যথার মতো খুবই সাধারণ উপসর্গ। কাজেই আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই থাকতে পারেন, যাঁদের কখনো না কখনো জিকা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে, কিন্তু তাঁরা কেউই বিষয়টি টের পাননি।
বাঁচার উপায়
দেশে প্রকৃতপক্ষে আরও কত মানুষ জিকা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বা হচ্ছেন, তা জানতে হয়তো অণুজীববিজ্ঞানীরা আরও বড় পরিসরে গবেষণামূলক কার্যক্রম চালাবেন। কিন্তু নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষায় প্রত্যেকেরই জানা উচিত এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়। এডিস মশা জিকা ভাইরাসের বাহক। তাই মশা থেকে বাঁচতে সচেতন হতে হবে সবাইকেই। রাতদিন যেকোনো সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। ফুলহাতা পোশাক এবং সম্পূর্ণ পা ঢেকে রাখে, এমন পায়জামা বা প্যান্ট পরতে হবে। ঘরে-বাইরে কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। সবার মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
সূত্র: আইসিডিডিআরবি