পৃথিবীর সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর শহরগুলোর একটা এখন ঢাকা। চারপাশের ধুলাবালু আমাদের শরীর আর ত্বকই শুধু নয়, চুলও করে তুলছে নিষ্প্রাণ। অকালে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, রোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বকে ব্রণের প্রবণতা—সবই হয়ে থাকে অতিরিক্ত ধুলাবালুর কারণে। তবে বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি পারলারের কর্ণধার শারমিন কচি জানালেন, কিছু অভ্যাস ও ঘরোয়া টোটকা মেনে ধুলাবালু থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করতে পারবেন আপনিও।
চুলের ওপর ধুলার প্রভাব
ধুলাবালুর কারণে মাথার ত্বকে দেখা যায় চুলকানি ও খুশকি। ধুলা ত্বকের সিবাম; অর্থাৎ প্রাকৃতিক তেল ও ঘামের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণে জীবাণুর সংক্রমণ হয়, যা থেকে হতে পারে চুলকানি, অস্বস্তি ও খুশকি। ধুলা চুলের আর্দ্রতা শোষণ করে, ফলে চুল হয়ে পড়ে শুষ্ক ও রুক্ষ। শারমিন কচি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ধুলার সংস্পর্শে থাকলে চুলের গঠন দুর্বল হয়ে যায়, এমনকি চুলের স্বাভাবিক রঙেও দেখা দেয় পরিবর্তন। ধুলাবালু চুলের ওপর একধরনের আস্তরণ তৈরি করে, ফলে চুল দেখায় রুক্ষ, নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ। এমনকি ধোয়ার পরও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলতে পারে চুল। এ ছাড়া ধুলায় থাকা ক্ষতিকর উপাদান মাথার ত্বকের রোমকূপ বা ফলিকল বন্ধ করে দেয়, যা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এটি একদিকে অতিরিক্ত চুল পড়ারও কারণ হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি চুল পাতলা করে ফেলে।
ধুলা যেভাবে ত্বকের ক্ষতি করে
উজ্জ্বলতা হারিয়ে ত্বক নিষ্প্রাণ ও মলিন করে তোলে বাতাসে থাকা ধুলাবালু। ধুলা ত্বকে জমে গিয়ে ঘাম ও তেলের সঙ্গে মিশে রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস ও ব্রণ দেখা দেয়। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকে এসব বেশি দেখা যায়। শারমিন কচি বলেন, বাতাসের ধুলা–ময়লা ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ নিয়ে আসতে পারে। এতে থাকা দূষিত উপাদান ও ফ্রি র্যাডিক্যাল ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ভেঙে দেয়, যার কারণে ত্বকে বলিরেখা ও ত্বক ঝুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। স্বাভাবিক বয়সের তুলনায় ত্বককে দেখায় অনেক বেশি বয়স্ক। অপর দিকে ধুলা ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয়, ফলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে। যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁদের জন্য ধুলা র্যাশ ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ধুলা থেকে চুলকে বাঁচাতে যা করতে হবে
চুল ঢেকে রাখুন
বাইরে যাওয়ার সময় স্কার্ফ বা টুপি দিয়ে চুল যতটা সম্ভব ঢেকে রাখুন। এতে চুল ধুলার সংস্পর্শে আসবে না। ক্ষতিও কম হবে।
নিয়মিত চুল ধোয়া
কাজের প্রয়োজনে যাঁদের নিয়মিত বাইরে যাতায়াত করতে হয়, তাঁদের চুলে ধুলা লাগে বেশি। তাঁদের প্রতিদিন চুল ধোয়ার পরামর্শ দিলেন শারমিন কচি। তবে এ ক্ষেত্রে মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
ডিপ কন্ডিশনিং
শ্যাম্পু ব্যবহারের পর চুলে কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না। চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কন্ডিশনারের পাশাপাশি হেয়ার সিরামও ব্যবহার করতে পারেন।
হিট স্টাইলিং কমান
কৃত্রিমভাবে চুল সোজা বা কোঁকড়া করার ক্ষেত্রে তাপের বদলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করুন। কেননা, চুলে তাপ বেশি ব্যবহার করলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। এ ধরনের চুলে ধুলার ক্ষতিকর প্রভাব বেশি।
ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করুন
চুলের সুস্থতা বজায় রাখতে বিভিন্ন প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ডিমের কুসুম, টক দইয়ের সঙ্গে বাজারে তৈরি প্রোটিন প্যাক ডাস্ট মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে রিবন্ডিং করা চুলে কোনোভাবেই হেনা বা মেহেদি প্যাক লাগানো যাবে না, বললেন শারমিন কচি।
ত্বক ভালো রাখতে যা করতে হবে
দিনে ২ থেকে ৩ বার মুখ ধোয়া: ধুলা ও অতিরিক্ত তেল দূর করতে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন দিনে দুই থেকে তিনবার। বারবার মুখ ধুলে ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে যায়, তবে সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
টোনার ব্যবহার করুন
রোমকূপ খুলে রাখতে ও ত্বক সতেজ রাখতে টোনারের তুলনা নেই। মুখ ধোয়ার পর টোনারও ব্যবহার করে নিন। তবে এটি অত্যাবশ্যক নয়।
সানস্ক্রিন লাগান
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সানস্ক্রিন ত্বককে রক্ষা করে। পাশাপাশি ধুলা থেকেও সুরক্ষা দেয় সানস্ক্রিন। তবে এটি ব্যবহারের পর তৈলাক্ত লাগলে কিছুটা ট্রান্সলুসেন্ট ফেস পাউডার দিয়ে নিতে পারেন, ত্বকে ধুলা বসবে না, ভালো থাকবে।
নিয়মিত স্ক্রাবিং করুন
সপ্তাহে এক দিন মুখে মৃদু স্ক্র্যাব ব্যবহার করে মৃত ত্বক ও ধুলার স্তর দূর করে নিতে পারেন। এতে ত্বক ফিরে পাবে উজ্জ্বলতা।
ত্বক আর্দ্র রাখুন
মুখ ধোয়ার পর ঋতুভেদে হালকা বা ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখুন।