টিউমার শব্দটি শুনলেই আতঙ্ক হয়, মনে হয় ক্যানসার হয়েছে। কিন্তু টিউমার আর ক্যানসার এক নয়। সব টিউমার ক্যানসার না-ও হতে পারে। আবার ক্যানসার টিউমার ছাড়াও কখনো ক্ষত, আলসার ইত্যাদি হিসেবে দেখা দিতে পারে, যেমন ব্রেস্ট টিউমার ও ব্রেস্ট ক্যানসার দুটো একই নয়।
টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ। যখন শরীরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক কোষগুলো কোথাও জমে একটি লাম্প বা গোটা বা চাকতির মতো প্রকাশ পায়, তখন একে টিউমার বলে।
টিউমারের ধরন
টিউমার দুই ধরনের হয়। একধরনের টিউমার শুধু এক জায়গায় বৃদ্ধি পেয়ে সেখানেই স্থির থাকে। এদের বলে বিনাইন টিউমার বা নিরীহ টিউমার। আরেক ধরনের টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লসিকা দিয়ে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে সেই অংশেরও স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, নতুন করে সেখানে টিউমার তৈরি করে। এগুলোকে বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ টিউমারই হলো ক্যানসার।
ক্যানসারের ধরন
- আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসার হতে পারে। ক্যানসারের শুরু শরীরের কোনো একটি অংশ দিয়ে হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়ায়। তবে টিউমার ছাড়াও ক্যানসার হতে পারে, যেমন ব্লাড ক্যানসার বা লিউকেমিয়া। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কোষগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তে বেশি পরিমাণে জমা হয়। ধীরে ধীরে রক্তের স্বাভাবিক কোষ কমতে আর অস্বাভাবিক কোষ বাড়তে থাকে।
- কোলন বা অন্ত্র, খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে টিউমার না হয়ে ক্ষত বা আলসারের মাধ্যমে ক্যানসার প্রকাশ পেতে পারে। মুখের ঘা ক্যানসার হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আলাদা গোটা বা টিউমার দেখা দেয় না।
- নারীদের ব্রেস্টে জীবনের যেকোনো সময়ে লাম্প বা চাকতি বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এর সবই ক্যানসার নয়। কোনোটি নিরীহ টিউমার বা ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ।
উপসর্গ ও চিকিৎসা
ক্যানসার হলে টিউমারের সঙ্গে বাড়তি কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন ওজন হ্রাস, অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, জ্বর ইত্যাদি। নিরীহ টিউমারের সাধারণত কোনো চিকিৎসা লাগে না। তবে যদি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসার কোষ পাওয়া যায়, তবে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির দরকার হয়।
শরীরে যেকোনো গোটা বা উল্লেখিত ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাম বা সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআই করে নিশ্চিত হন এটি টিউমার কি না। তারপর সেখান থেকে কিছু কোষ নিয়ে বায়োপসি করে নিশ্চিত হন, সেগুলো ক্যানসারজাতীয় কি না।
অধ্যাপক ডা. মো. ইয়াকুব আলী, রেডিয়েশন ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট, আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা