মানুষ এখন প্লাস্টিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সচেতন। প্লাস্টিক নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা আলো ফেলছে এর স্বাস্থ্যঝুঁকির নানা দিকে। পরিবেশদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ এই প্লাস্টিক। তবে হুট করে আপনি একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্লাস্টিকের পণ্য সব ঘর থেকে বাতিল করে দিতে পারবেন না। আপনাকে ছোট ছোট ‘বেবি স্টেপ’–এর ভেতর দিয়ে এগোতে হবে। আর সে জন্য সবার আগে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্লাস্টিক চিহ্নিত করে বাদ দিন।
একাধিক গবেষণা জানিয়েছে, কালো রঙের প্লাস্টিকে ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, কালো রঙের প্লাস্টিকের মাধ্যমে শরীরে পলিব্রমিনেটেড ডাইফিনাইল ইথারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ উপাদান বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের জন্য দায়ী। ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত।
২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, কালো রঙের প্লাস্টিকে ব্রমিনেটেড ফ্লেম রিটার্ডান্টস ও অরগানোফসফেট ফ্লেম রিটার্ডান্টসের পরিমাণ সর্বোচ্চ। ২০৩ ধরনের কালো রঙের প্লাস্টিকের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, সব ধরনের কালো প্লাস্টিকেই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই দুই রাসায়নিক আছে। এই প্লাস্টিক যেভাবেই ব্যবহার করেন না কেন, এর মাধ্যমে ক্ষতিকর উপাদানগুলো মানবদেহ ও পরিবেশে প্রবেশ করে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ‘নিউরোটক্সিডিটি’র অন্যতম কারণ এ বিষাক্ত রাসায়নিক।
কালো রঙের প্লাস্টিকের কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা অন্য রঙের প্লাস্টিকে নেই বা পরিমাণে সামান্য। কালো রঙের প্লাস্টিকে ব্রোমিনের মাত্রা সর্বোচ্চ। এতে আছে উচ্চমাত্রার ফ্যালেটস ও বিসফেনল–এ (বিপিএ)। এসব বিষাক্ত উপাদানের সঙ্গে ক্যানসার ছাড়াও নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার সরাসরি সম্পর্ক আছে। যেমন স্থূলতা, নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যা অথবা গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস। শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন এতে। গর্ভাবস্থায় বিপিএর ব্যবহারে শিশুর ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। শিশুকালে শরীরে অতিরিক্ত বিপিএ প্রবেশ করলে পরবর্তী সময়ে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কালো রঙের প্লাস্টিকে খাবার বা পানি গরম করলে বা সরাসরি ওভেনে দিলে এসব বিষাক্ত উপাদান খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যায়।