গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, যা অনুসরণ করলে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝা যাবে:
– পরিবারে থাইরয়েড রোগের ইতিহাস থাকলে।
– গলগণ্ড বা গলা ফুলে থাকলে।
– থাইরয়েড অপারেশন করা থাকলে।
– থাইরয়েড অ্যান্টিবডি পজিটিভ হলে।
– গর্ভধারণে সমস্যা থাকলে বা গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে।
– আয়োডিনের ঘাটতি থাকলে।
– অতিরিক্ত ওজন থাকলে।
– থাইরয়েড ওষুধ সেবন করলে।
– টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকলে।
– পূর্বের সন্তান জন্মগত থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত হলে।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি বা হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হরমোনের আধিক্য বা হাইপারথাইরয়েডিজম দুটোই হতে পারে। হরমোনের আধিক্যের সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
– গ্রেভস ডিজিজ, একটি অটোইমিউন রোগ।
– গর্ভাবস্থায় সাময়িক থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়া।
– মাল্টিনডুলার গয়টার (গলগণ্ড)।
– থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ বা থাইরয়েডাইটিস।
– লেভোথাইরোক্সিনের অতিরিক্ত ডোজ নেওয়া।
থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ততার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, ঘুম কম হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, অস্থিরতা, অতিরিক্ত গরম লাগা, হাত বা শরীর কাঁপা, বারবার পায়খানা হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, মাসিক অনিয়মিত হওয়া, চুল পড়া এবং গলগণ্ড।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করলে যে সমস্যাগুলি হতে পারে:
– রক্তচাপ বৃদ্ধি ও প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন নির্গমন।
– গর্ভফুলের সমস্যা।
– আগেভাগে প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা।
– রক্তশূন্যতা ও মৃত শিশুর জন্ম।
– বারবার ভ্রূণ নষ্ট হওয়া।
– শিশুর ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি, বিশেষ করে হার্টের সমস্যা।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের আদর্শ মাত্রা হলো:
– প্রথম তিন মাসে: ০.১-২.০
– দ্বিতীয় তিন মাসে: ০.২-২.৫
– তৃতীয় তিন মাসে: ০.৩-৩.০
যদি থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা টার্গেটের মধ্যে না থাকে, তা হলে মা ও শিশুর জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য থাকলে হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কার্বিমাজল, মেথিমাজল, প্রোপাইল থায়োইউরাসিলের মতো ওষুধের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে ওষুধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ।