কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ যা প্রাণী দেহের সব অংশে কম-বেশি বিদ্যমান। মানবদেহে কোলেস্টেরল বিভিন্ন শারীরিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাঠামো গঠনে সহায়ক। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষাগারে নির্ণয় করা যায় এবং এর একটি স্বাস্থ্যসম্মত মাত্রা আছে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন।
#### কোলেস্টেরলের প্রকারভেদ:
১. **লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL)**:
এটি খারাপ কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। এলডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়ালে জমা হয়ে আর্টারি সংকুচিত করে এবং রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। ফলস্বরূপ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
২. **হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL)**:
এটি ভালো কোলেস্টেরল নামে পরিচিত। এইচডিএল কোলেস্টেরল রক্তনালীর দেয়াল থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করে লিভারে নিয়ে যায়, যেখানে এটি প্রক্রিয়াজাত হয় এবং দেহ থেকে নির্গত হয়। উচ্চ এইচডিএল স্তর হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৩. **ট্রাইগ্লিসারাইড (TG)**:
এটি চর্বিজাতীয় খাদ্যে বেশি পরিমাণে বিদ্যমান। রক্তে এর মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধির ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
#### কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের উপায়:
১. **সুষম খাদ্যাভ্যাস**:
গরু, খাসি, হাঁস, মুরগির মাংস পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করুন। প্রাণিজ খাদ্যের মাধ্যমে কোলেস্টেরল গ্রহণ করা হয়, যা হজম শেষে রক্তে প্রবেশ করে। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২. **নিয়মিত ব্যায়াম**:
সপ্তাহে অন্তত ২ ঘণ্টা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. **তামাকজাতীয় পণ্য বর্জন**:
ধূমপান, পাতি-জর্দা এবং অন্যান্য তামাকজাতীয় পণ্য থেকে বিরত থাকুন।
৪. **নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা**:
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
৫. **দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন**:
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন, সময়মতো ঘুমাতে যান এবং শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যাবে।
**লেখক**: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা.