### পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি: অন্তঃসত্ত্বা নারীর একটি জটিল হার্ট রোগ
পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি একটি বিরল হার্ট রোগ, যা গর্ভধারণের শেষ তিন মাসে বা প্রসবের পর পাঁচ মাসের মধ্যে দেখা যায়। এতে হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায় এবং রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, যা হৃৎস্পন্দন বা শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি গর্ভাবস্থায় জটিল ও বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
#### লক্ষণসমূহ:
– অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
– শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে শোয়া অবস্থায়
– পায়ে পানি আসা
– বুক ধড়ফড় করা
– দ্রুত বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
#### কারণসমূহ:
পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথির সঠিক কারণ পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:
– হরমোনাল পরিবর্তন
– ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া
– হৃৎপিণ্ডের কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস
– জিনগত কারণ
#### ঝুঁকির কারণ:
– বেশি বয়সে গর্ভধারণ (৩০ বছরের বেশি)
– একাধিক গর্ভাবস্থা (যমজ বা এর বেশি)
– উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-একলাম্পসিয়া
– দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড থেরাপি
– হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস
#### চিকিৎসা:
পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা ও শারীরিক লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা। চিকিৎসা হিসেবে:
– হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ ও শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য ওষুধ
– রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমাতে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট
– শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা কমাতে ডাইইউরেটিকস জাতীয় ওষুধ
– প্রয়োজনে হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার বা অন্য যন্ত্র প্রতিস্থাপন
#### পরামর্শ:
– গর্ভাবস্থার শেষ মাসে ও প্রয়োজনে প্রসবের পর ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা
– উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা
– প্রি-একলাম্পসিয়া বা গর্ভাবস্থার সময় যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ সম্পর্কে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ
পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি গুরুতর ও প্রাণঘাতী সমস্যা হতে পারে, তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাই গর্ভাবস্থার সময় যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা. মো. মোশফেকুর রহমান খান: সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা.