**ফুসফুসে অতিরিক্ত বাতাস জমা এবং এমফাইসিমা: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার**
ফুসফুস মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সচল রাখে। তবে এটি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যার মধ্যে একটি জটিল ব্যাধি হলো **এমফাইসিমা**। এই রোগের কারণে ফুসফুসে অতিরিক্ত বাতাস জমে, যা প্রধানত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। ফুসফুসে বাড়তি বাতাস জমলে বক্ষ ফোলাভাব দেখা দেয়, কাশি বাড়ে এবং শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে। এমফাইসিমা ধীরে ধীরে মানবদেহে প্রভাব ফেলে এবং একদিনে তৈরি হয় না।
### **কেন হয় এমফাইসিমা?**
– **অ্যাজমা বা হাঁপানি:** যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, তাদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
– **ক্রনিক ব্রংকাইটিস:** দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিসেও ফুসফুসে এমফাইসিমা হতে পারে।
– **ধূমপান:** এটি ফুসফুসের সবচেয়ে ক্ষতিকর শত্রু। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
– **জীবাণু সংক্রমণ:** ফুসফুসে বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের ফলেও এমফাইসিমা হতে পারে।
– **বংশগত কারণ:** কিছু ক্ষেত্রে এটি পারিবারিকভাবে ঘটে।
– **পরিবেশ দূষণ:** ধোঁয়া, কালো ধোঁয়ার দূষণ এই রোগের অন্যতম কারণ।
### **লক্ষণসমূহ:**
– প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, সামান্য পরিশ্রমেই দম ফুরিয়ে আসা।
– শ্বাস নেওয়ার সময় গলার শিরা ফুলে যাওয়া।
– পেটে ও পায়ে পানি জমা।
– লিভারের আকার বৃদ্ধি।
– রক্তশূন্যতা এবং শরীরের রং নীলচে হয়ে যাওয়া।
– বুকের আকৃতির পরিবর্তন।
– রোগ জটিল হলে শ্বাসযন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের অচলতার কারণে **হার্ট ফেইলিওর** হতে পারে।
– ক্রনিক ব্রংকাইটিসের কারণে প্রাথমিক অবস্থায় শ্বাসকষ্ট তীব্র হয় না, তবে পরে হৃদযন্ত্রের ডান পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।
### **প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:**
এমফাইসিমা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য না হলেও এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
– ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
– শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
– জীবাণু সংক্রমণ হলে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
– শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত ব্যায়াম কার্যকর হতে পারে।
– পরিবেশ দূষণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা উচিত।
সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা এমফাইসিমা রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।
**লেখক:**
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।