**গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু: ঝুঁকি ও প্রতিকার**
গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এ সময় মায়েদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। পাশাপাশি, হরমোনজনিত পরিবর্তনের ফলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও রক্তনালিতে এমন পরিবেশ তৈরি হয়, যা ডেঙ্গুর মতো ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়ের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
### **ডেঙ্গুর কারণে গর্ভাবস্থার জটিলতা**
1. **গর্ভপাতের আশঙ্কা:** ডেঙ্গু সংক্রমণ গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
2. **প্রিম্যাচিউর বার্থ:** শিশুর নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
3. **জন্মগত সমস্যা:** কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু সংক্রমণ গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি বাড়াতে পারে।
4. **জন্মপরবর্তী ঝুঁকি:** শিশুর রক্ত বা সংক্রমণজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
### **গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুর লক্ষণ**
– উচ্চমাত্রায় জ্বর
– শরীরে ব্যথা
– ত্বকে র্যাশ
– ক্লান্তি বা দুর্বলতা
এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
### **ঝুঁকি ও মৃত্যু কারণ**
গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গুর কিছু মারাত্মক প্রভাব রয়েছে, যা মায়ের মৃত্যুর কারণ হতে পারে:
1. **অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা কমে যাওয়া:** উচ্চমাত্রার জ্বরের ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে।
2. **ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার:** এটি রক্তপাত বাড়ায় এবং প্রাণঘাতী হতে পারে।
3. **প্লাটিলেটের ঘাটতি:** প্লাটিলেট সংখ্যা হ্রাসের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়, যা গুরুতর রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
4. **প্রি-একলাম্পসিয়া বা একলাম্পসিয়া:** ডেঙ্গু এই জটিল অবস্থার কারণ হতে পারে, যা মায়ের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে।
5. **চিকিৎসার অভাব:** সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
### **পরীক্ষা ও নিরীক্ষা**
ডেঙ্গু শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা:
– **ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন টেস্ট:** সংক্রমণের প্রথম দুই দিনের মধ্যে করা উচিত।
– **অ্যান্টিবডি টেস্ট:** IgM ও IgG অ্যান্টিবডির উপস্থিতি চিহ্নিত করে।
– **প্লাটিলেট কাউন্ট:** প্লাটিলেটের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
– **রক্তের অন্যান্য পরীক্ষা:** হিমোগ্লোবিন ও হেমাটোক্রিটের স্তর দেখা।
– **আলট্রাসনোগ্রাফি:** গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন।
### **প্রতিরোধ ও করণীয়**
1. **মশার বিস্তার রোধ:** মশারি ব্যবহার, সুরক্ষিত পোশাক পরা এবং মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা।
2. **পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:** ঘর ও আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
3. **চিকিৎসকের পরামর্শ:** ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা।
4. **হাসপাতালে ভর্তি:** গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় দ্রুত শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো সতর্ক হলে মা ও সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।