**রেক্টাল ক্যান্সার: আমান সাহেবের গল্প থেকে শিক্ষা**
অর্ধশতবর্ষী আমান সাহেব (ছদ্ম নাম) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ব্যস্ত পেশাজীবনের মাঝেও তিনি নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন। তবে সম্প্রতি পায়খানা নিয়ে একটি সমস্যার মুখোমুখি হন। আগে প্রতিদিন সকালে নিয়মিত কোষ্ঠ পরিষ্কার হতো। কিন্তু ইদানীং পায়খানার সময় ও ধরনে পরিবর্তন দেখা দেয়। কখনো সকালে, কখনো বিকালে, আবার কখনো একাধিকবার পায়খানা হচ্ছে। প্রথমে এটাকে পাত্তা দেননি, ভেবেছিলেন হয়তো খাবারে গণ্ডগোল হয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সমস্যাটি বাড়তে থাকে।
শেষে নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। চিকিৎসক সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, বিষয়টি তেমন গুরুতর নয়। তবে সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। যদিও বিষয়টিকে আমান সাহেব গুরুত্ব দেননি।
কিছুদিন পর হঠাৎ পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় এবং পেট ফুলে ওঠে। দ্রুত একজন সার্জনের শরণাপন্ন হন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তার রেক্টামে একটি টিউমার রয়েছে, যা মলত্যাগের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হয়, এটি রেক্টাল ক্যান্সার।
### কেন রেক্টাল ক্যান্সার বাড়ছে?
রেক্টাল ক্যান্সারের অন্যতম কারণ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস। বিশেষ করে যারা শাকসবজি কম খান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকছেন, তাদের ঝুঁকি বাড়ছে।
### রেক্টাল ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ
রেক্টাল ক্যান্সারের লক্ষণগুলো অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না। তবে কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, যেমন:
– **পায়খানার অভ্যাসের পরিবর্তন**: আগে যদি দিনে একবার হতো, এখন তা কয়েকবার বা অনিয়মিতভাবে হতে পারে।
– **মলের প্রকৃতির পরিবর্তন**: মল কঠিন বা অতিরিক্ত নরম হয়ে যাওয়া।
– **রক্ত বা কালো মল**: মলের সঙ্গে রক্ত মেশা বা কালো পায়খানা হওয়া।
– **মিউকাস নির্গমন**: পায়খানার সঙ্গে শ্লেষ্মা যাওয়া।
– **অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি**: টয়লেটে যাওয়ার পরেও মনে হওয়া যে পায়খানা পুরোপুরি হয়নি।
– **ওজন হ্রাস**: অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যাওয়া।
– **পেট ব্যথা**: তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি।
### করণীয়
যেকোনো সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। রেক্টাল ক্যান্সার নিরাময়ে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকর।
লেখক: কোলোরেক্টাল সার্জন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।