অটিজম শব্দটি মূলত “নিজেকে গুটিয়ে রাখা” বা “নিজের মধ্যে আবদ্ধ থাকা” এমন অর্থ বোঝায়। এটি একটি ধরনের বিকাশজনিত ব্যাধি, যেখানে শিশুর সামাজিক, ভাষাগত এবং আচরণগত বিকাশে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অটিজমের কারণে শিশুরা সাধারণত কথাবার্তা, যোগাযোগ এবং আচরণে অন্যান্য শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না। বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫.২টি শিশু প্রতি ১০০০ জনে অটিজমে আক্রান্ত হয়, তবে ছেলেরা এই অবস্থায় প্রায় চার গুণ বেশি আক্রান্ত হয়।
**অটিজমের কারণ**:
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়, তবে বিভিন্ন জেনেটিক, জন্মগত, পারিবারিক এবং সামাজিক উপাদানের সমন্বয়ে এটি ঘটতে পারে।
১. **জন্মগত কারণ** (৫০%)
২. **প্রসবকালীন জটিলতা**: যেমন মাথায় আঘাত, শ্বাসকষ্ট, কিংবা অন্যান্য বড় ধরনের অসুস্থতা।
৩. **বায়োলজিক্যাল কারণ**: যেমন সিএসএফজি হোমোভিনিলিক অ্যাসিডের বাড়াবাড়ি।
৪. **ক্রোমোজোমাল সমস্যা**: এই কারণে মস্তিষ্কের বিকাশে ত্রুটি হতে পারে।
৫. **সাইকোলজিক্যাল কারণ**: পিতামাতার অতিরিক্ত আবেগহীন বা শীতল আচরণ, তাদের মধ্যে অনুপস্থিত সংবেদনশীলতা ও সম্পর্কের ঘাটতি।
**অটিজমের প্রধান লক্ষণ**:
১. **সামাজিক বিকাশের অভাব**: শিশুটি বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন বা সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না।
২. **ভাষাগত সমস্যা**: অনেক শিশুর কথা বলার আগ্রহ বা ক্ষমতা থাকে না, অথবা কথা পুরোপুরি বুঝিয়ে বলতে পারে না। কিছু শিশুর ভাষার বিকাশ তিন বছর পর বন্ধ হয়ে যায়।
৩. **আচরণগত সমস্যা**: যেমন, শিশুদের মধ্যে সেরোটাইপ আচরণ দেখা যায়, যেমন বারবার একই কাজ করা।
৪. **দৃষ্টির সমস্যাগুলি**: শিশুরা সাধারণত কাউকে চোখের দিকে তাকিয়ে যোগাযোগ করতে চায় না এবং তারা নিজের মতো চলাফেরা করে।
**অতিরিক্ত লক্ষণ**:
১. শিশুরা পিতামাতার আদর বা সোহাগ বোঝে না, যেমন যখন তাকে কোলে নেয়া হয়, তখন তারা হাসে না বা তাকায় না।
২. সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলায় অংশ নেয় না, একাকী জীবনযাপন করে।
৩. তারা এক ধরনের খেলনা বা একই ধরনের খাবার পছন্দ করে।
৪. একই ভঙ্গিতে হাত তালি দেয়া, শব্দ করা, বা টেবিলের চতুর্দিকে হাঁটা, দৌড়ানো ইত্যাদি।
অটিজমের লক্ষণ ও আচরণগুলো শিশুর প্রতিটি বিকাশের স্তরে ভিন্ন হতে পারে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সহায়তা প্রদান শিশুর বিকাশে সহায়ক হতে পারে।
**লেখক**: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।