এক্স-রে রিপোর্ট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডাক্তার রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার পদক্ষেপ নেন, যা বিশ্লেষণ সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যদি এই বিশ্লেষণটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়? এমনই একটি চিকিৎসা সহায়ক মেশিন লার্নিং মডেল তৈরি করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের দল “অস্টিওঅ্যাসিস্ট”। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি (বিএমইএস) প্রতি বছর আয়োজন করে মেডট্রনিক-বিএমইএস স্টুডেন্ট ডিজাইন প্রতিযোগিতা। এবারের আসর অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে। প্রতিযোগিতায় চারটি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়, যার মধ্যে “এআই বা এমএল ফর স্পোর্ট ইনজুরিজ অ্যান্ড অর্থোপেডিক কন্ডিশনস” বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বুয়েটের এই দল, যেখানে ছিলেন সাঈদ সাজ্জাদ ও ফারিহিন রহমান, দুজনই বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী।
দলের নাম “অস্টিওঅ্যাসিস্ট” এবং তাদের সফটওয়্যারটি মূলত এক্স-রে রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে ডাক্তারকে অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ে সাহায্য করবে। এ প্রসঙ্গে দলের সদস্য সাঈদ সাজ্জাদ বলেন, “আমাদের সফটওয়্যারটি এক্স-রে থেকে অস্টিওপোরোসিস শনাক্ত করতে পারে, যেখানে সাধারণত ডেক্সা স্ক্যান প্রয়োজন হয়। এই প্রযুক্তিটি ঢাকার বাইরে বিরল এবং ঢাকাতেও সীমিত। এই মেশিন লার্নিং মডেলটি সহজে এক্স-রে থেকেই হাড়ের খনিজ ঘনত্বের পরিমাণ নির্ণয় করতে পারে।”
প্রতিযোগিতায় আবেদন জমা দেওয়ার সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হলেও শেষ মুহূর্তে তারা আবেদন করতে সক্ষম হন। পরে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করায় আনন্দিত দলটি। ৯০টি দলের মধ্যে ১২টি দলকে ফাইনালের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে এশিয়া মহাদেশের একমাত্র বিজয়ী ছিল বুয়েটের দল।
সফটওয়্যারটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সাঈদ সাজ্জাদ বলেন, “আমাদের সফটওয়্যারটি এখনো প্রোটোটাইপ পর্যায়ে রয়েছে। লক্ষ্য হলো, এটি রেডিওলজিস্ট ও অর্থোপেডিক ডাক্তারদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা।”
এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক তৌফিক হাসান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দলগুলো সাধারণত বিজয়ী হলেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, যা অবশেষে সফল হলো।”
বুয়েটের প্রশাসন ও সহায়কদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দলটি ভবিষ্যতে সবার জন্য সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।