দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০২:৩৮

আর্থ্রাইটিস, পঙ্গুত্ব এবং পুনর্বাসন চিকিৎসা

আর্থ্রাইটিস একটি গ্রিক শব্দ, যেখানে “আর্থো” মানে হলো জোড়া এবং “আইটিস” মানে প্রদাহ। এর ফলে, আর্থ্রাইটিস রোগে শরীরের যে কোনো জোড়ায় প্রদাহ হয়ে থাকে। মানব শরীর এক অপূর্ব নির্মাণ, এবং এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি হলো জয়েন্ট বা জোড়া। বিভিন্ন প্রকারের জোড়া রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে আমি পরবর্তীতে লিখব। আর্থ্রাইটিস রোগ এক বা একাধিক জয়েন্টে হতে পারে, এবং এটি প্রায় শতাধিক প্রকারে বিভক্ত। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে ধরনের আর্থ্রাইটিস রোগীরা ভোগেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অস্টিও-আর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সেরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, লুপাস, এনকাইলজিং স্পন্ডালাইটিস, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস, মেটাবলিক আর্থ্রাইটিস, গাউট, ফাইব্রোমায়ালজিয়া, সেপটিক আর্থ্রাইটিস এবং আরও অনেক।

 

এই রোগটি সাদা-কালো, বাচ্চা-বুড়ো, মহিলা-পুরুষ, সব বয়সী এবং সকল সংস্কৃতির মানুষের হতে পারে। তবে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তি এবং মহিলাদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

 

আর্থ্রাইটিসের কিছু সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে— ব্যথা, জয়েন্টে নড়াচড়ায় ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি, ফুলে যাওয়া, গরম হয়ে যাওয়াসহ চলাফেরায় অসুবিধা, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়ার রঙ পরিবর্তন, জ্বর, ক্লান্তি, অবসাদ, হতাশা, অনিদ্রা ইত্যাদি। এসব উপসর্গের কারণে রোগী ধীরে ধীরে তার জয়েন্টের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, এবং অবশেষে পঙ্গু বা অক্ষম হয়ে যেতে পারে। জয়েন্ট বেঁকে যেতে পারে, শরীরের পেশি শুকিয়ে যেতে পারে এবং জয়েন্টে শক্তি চলে আসতে পারে, যা এক পর্যায়ে রোগীকে সম্পূর্ণ অক্ষম বা হেনডিক্যাপ করে তোলে।

 

রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসন চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব রোগ নির্ণয় করে শারীরিক কষ্ট কমানো এবং পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়া। আর্থ্রাইটিসের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে, এবং এ ক্ষেত্রে একজন রিহ্যাব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা, সেরোলজি, এক্সরে ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন, এবং রোগের লক্ষণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট আর্থ্রাইটিস নির্ধারণ করতে পারেন।

 

আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যথা কমানোর জন্য NSAIDs, ডিজিজ মডিফাইং ড্রাগস, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ব্যবহৃত হতে পারে। ফিজিওথেরাপি এবং পুনর্বাসন চিকিৎসা খুবই কার্যকরী, যা রোগীর ব্যথা কমাতে এবং তাকে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে সহায়তা করে। ফিজিওথেরাপি, ম্যানুয়াল থেরাপি, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বা হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড থেরাপি এসবের মাধ্যমে রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটে।

 

আর্থ্রাইটিসে ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। কুসুম গরম পানি দিয়ে সেক বা গোসল করা যেতে পারে ব্যথা কমানোর জন্য। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, শারীরিক ব্যায়াম এবং পরিশ্রমের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, শর্করা জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমানো, এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খাওয়ার মাধ্যমে আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে দুধ, ডিম, মাছ, শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া, যেকোনো ধরনের ভারী কাজ বা দীর্ঘ সময় নিচু অবস্থায় বসে থাকা এড়িয়ে চলা উচিত।

 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট