ডায়াবেটিস হলে রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বা পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। ইনসুলিন মূলত রক্তের গ্লুকোজ বা শর্করার বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের শর্করা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।বর্তমানে অনেকেই শর্করা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার জন্য জিরো কার্ব বা লো কার্ব ডায়েট অনুসরণ করছেন, কিন্তু এসব ডায়েটের ফলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। শর্করা শরীরের প্রধান জ্বালানি এবং দৈনিক শক্তির উৎস, তাই এটি একেবারে বাদ দেওয়া উচিত নয়। তবে, এটি বুঝতে হবে কোন ধরনের শর্করা খাওয়া নিরাপদ।
শর্করা মূলত দুই ধরনের— সহজ শর্করা এবং জটিল শর্করা। সহজ শর্করা যেমন সাদা চিনি, সাদা চাল, সাদা ময়দা, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি দ্রুত ভেঙে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে, জটিল শর্করায় ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে এবং গ্লুকোজ ধীরে ধীরে শোষিত হয়, যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব একটা বাড়ে না। উদাহরণস্বরূপ, লাল চাল, লাল আটা, গোটা শস্য যেমন ওটস, ব্রাউন নুডলস বা ব্রাউন পাস্তা ইত্যাদি জটিল শর্করার উদাহরণ।
এছাড়া, শাকসবজি ও ফলমূলেও কিছু পরিমাণ শর্করা থাকে, কিন্তু তা সাধারণত ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। আলু, যদিও শাকসবজি হিসেবে পরিচিত, তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি, তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা এটি এড়িয়ে চলতে পারেন। তবে, মিষ্টি আলুতে বেশি ফাইবার থাকে, তাই এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
তবে, মাটির নিচে ফলানো সব শাকসবজি যেমন গাজর, মুলা, বিট, শালগম ইত্যাদি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, এবং এগুলি ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। ফলে, এসব শাকসবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
ফলমূলের ক্ষেত্রেও কিছু ফল যেমন খেজুর, তরমুজ, আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে অধিকাংশ ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি, এবং এতে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার থাকে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। সুতরাং, পরিমিত পরিমাণে ফল খাওয়া যেতে পারে।
ডা. তানজিনা হোসেন
অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিনলাইফ মেডিকেল কলেজ