বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শারীরিক ও মানসিক শক্তি, পাশাপাশি দেহের কোষের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। টিস্যুর কর্মক্ষমতা বা সামর্থ্য কমার হার ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, যেমন ৮০ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি এখনও কর্মক্ষম থাকতে পারেন, আবার কিছু ২০-৩০ বছর বয়সী ব্যক্তি শারীরিক সমস্যা ও জয়েন্ট বা মাংসপেশির ব্যথায় ভোগেন, যা সাধারণত আমরা বাত হিসেবে জানি। মহিলাদের সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর এবং পুরুষদের ৫০ বছর বয়সের পর বয়সজনিত জয়েন্ট সমস্যায় ভোগা শুরু হয়। আমাদের দেশে ৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার ৬৫% মানুষ ব্যথাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। বিশেষভাবে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে বা অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়, যেমন- ঘাড়, কোমর, স্কন্ধ বা হাঁটু, সেগুলোতে ব্যথা বেশি দেখা যায়।
বাতের ব্যথার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে ৯০% হচ্ছে মেকানিক্যাল সমস্যা। মেকানিক্যাল সমস্যার মধ্যে মেরুদণ্ডের মাংসপেশি বা লিগামেন্ট মচকানো, কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা বা কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি, বয়সজনিত হাড় ও জয়েন্টের ক্ষয়, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআথ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পন্ডাইলোসিস, বার্সাইটিস, টেন্ডিনাইটিস, স্নায়ুবিক রোগ, টিউমার, ক্যান্সার, মাংসপেশির রোগ, ইউরিক এসিড বৃদ্ধি, অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং অতিরিক্ত শরীরের ওজনও এর কারণ হতে পারে।
বিশেষ করে, শীতে এসব ব্যথা আরও বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এবং কর্মহীন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ব্যথা বা যন্ত্রণা মানুষের জন্য এক অস্বস্তিকর সমস্যা। সাধারণভাবে দুটি বা দুটি অধিক হাড় বা তরুণাস্থি শরীরের একটি স্থানে সংযোগ স্থাপন করে একটি জয়েন্ট তৈরি করে, যা মাংসপেশি, টেন্ডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, ডিস্ক এবং সাইনোভিয়াল মেমব্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। এই টিস্যুগুলো জয়েন্টকে শক্তি এবং দৃঢ়তা প্রদান করে এবং জয়েন্টের সারফেসগুলোকে মসৃণ রাখে। মেরুদণ্ডের দুটি হাড়ের মধ্যে অবস্থিত ডিস্ক শক এবজরবার হিসেবে কাজ করে হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব অস্থি বা জয়েন্টগুলোতে ক্ষয়, বৃদ্ধ বয়সে প্রদাহ ও অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে ব্যথা সৃষ্টি হয় এবং মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।
**করণীয়:**
১. অতিরিক্ত ঠান্ডায় বাইরে না গিয়ে বাসায় হাঁটা, চলাফেরা ও ব্যায়াম করতে হবে।
২. হাইড্রেশন ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, কারণ পানির অভাবে ব্যথা বাড়তে পারে।
৩. শরীর যাতে অতিরিক্ত তাপ না হারায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. বাসায় ২-৩ বেলা হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিটিং প্যাড দিয়ে গরম সেঁক খুবই উপকারী।
৫. শীতে বাসায় রুম হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে গোসল ও স্টিমবাথ উপকারী। তবে মাথায় গরম পানি ঢালা যাবে না।
৭. কাজকর্ম, শোয়া এবং বসার সময় সঠিক দেহভঙ্গি মেনে চলতে হবে।
৮. বাসায় নরম সোলের জুতা ব্যবহার করা উচিত।
৯. ফলমূল এবং শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। তবে যাদের গাউট জাতীয় বাত আছে, তারা লাল মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টি, ঘি, চর্বি, সামুদ্রিক মাছ এবং পুঁইশাক কম খেতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা।