নারীদের প্রতি মাসে নিজে নিজেই স্তনের পরীক্ষা করা উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায়, ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত, ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব নারীদের প্রতি দুই বছরে একবার এবং ৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের বছরে একবার স্তন স্ক্রিনিং করানো উচিত।স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে সাধারণত ম্যামোগ্রাম এবং আলট্রাসাউন্ড উভয় পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে চিকিৎসকের সঙ্গে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং নিয়ে আলোচনা করে কবে থেকে শুরু করা উচিত তা নির্ধারণ করুন। বিশেষ করে, পরিবারের কারও অল্প বয়সে স্তন ক্যানসার থাকলে, চিকিৎসকের পরামর্শে আরও আগে স্ক্রিনিং শুরু করা জরুরি।
স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের উদ্দেশ্য হলো দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত করে এটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করা। নিয়মিত স্ক্রিনিং ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং চিকিৎসকেরা লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই ক্যানসার নির্ণয় করতে সক্ষম হন।
**আলট্রাসাউন্ড না ম্যামোগ্রাম?**
এখানে বলা যায় না যে একটি পরীক্ষা অন্যটির চেয়ে ভালো। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য মূলত ম্যামোগ্রাম ব্যবহার করা হয়, যা প্রাথমিক স্ক্রিনিং টুল হিসেবে কার্যকর। তবে স্তনে চাকা বা অস্বাভাবিক কিছু শনাক্ত হলে, আলট্রাসাউন্ডও ব্যবহার করা হয়। এভাবে দুটিই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
**ম্যামোগ্রাম:**
ম্যামোগ্রাম হলো স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের প্রধান পদ্ধতি, যেখানে কম মাত্রার এক্স-রে ব্যবহার করে স্তনের ছবি তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সামান্য চাপ অনুভূত হয়, যা খুব অল্প সময়ের জন্য। ম্যামোগ্রাম টিউমারের চারপাশের ক্ষুদ্র ক্যালসিয়ামের সঞ্চয় বা মাইক্রোক্যালসিফিকেশন শনাক্তে সাহায্য করে। রেডিওলজিস্ট পরে এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করেন এবং সন্দেহজনক কিছু থাকলে আলট্রাসাউন্ডসহ আরও পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত ৫-১০ শতাংশ নারীকে আরও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্যানসার পাওয়া যায় না।
**আলট্রাসাউন্ড:**
আলট্রাসাউন্ড শরীরের টিস্যু বিশ্লেষণে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে ছবি তৈরি করে। এটি বিকিরণহীন হওয়ায় গর্ভবতী নারীদের জন্য নিরাপদ। আলট্রাসাউন্ড চাকাগুলো শক্ত না তরলপূর্ণ তা নির্ধারণে সহায়তা করে।
**কেন সরাসরি আলট্রাসাউন্ড করা হয় না?**
আলট্রাসাউন্ডের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা স্ক্রিনিং পরীক্ষায় একে কম কার্যকর করে তোলে। পুরো স্তনের ছবি একবারে নেওয়া সম্ভব নয় এবং এটি অপারেটরের ওপর নির্ভরশীল। স্তনের গভীর অংশগুলোও ধারণ করতে পারে না। মাইক্রোক্যালসিফিকেশন দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় স্তন ক্যানসারের প্রথম দিকের লক্ষণগুলি এটি ধরতে পারে না।
**কখন আলট্রাসাউন্ড সহায়ক হতে পারে?**
কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড ভালো বিকল্প হতে পারে। যেমন:
– আপনি যদি স্পষ্ট চাকা অনুভব করেন, অথচ ম্যামোগ্রামে কিছু না দেখা যায়।
– আপনার বয়স ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে এবং স্তনে সমস্যা আছে।
– আপনি গর্ভবতী এবং স্তনে সমস্যা রয়েছে।
– স্তনে সিস্ট রয়েছে যা নিষ্কাশন করতে হবে।
কিছু নারীর ক্ষেত্রে ম্যামোগ্রাম ও আলট্রাসাউন্ড দুটিই প্রয়োজন, বিশেষত ঘন টিস্যুযুক্ত স্তনের জন্য।