বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে, শরীরে পানি জমা হলে সেটি কিডনির সমস্যার নির্দেশক। যদিও এটি সত্য যে কিডনি সমস্যা হলে শরীরে পানি জমে, তবে এটি সর্বদা এমন নয়। কিডনির গুরুতর অসুস্থতা না হলে, শরীরে পানি জমা সাধারণত হয় না। শিশুদের ক্ষেত্রে, কিডনি ফেলুর বা কিডনি ঠিকমতো কাজ না করার কারণে শরীরে পানি জমে, এবং এই সমস্যা শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই কিডনি ফেলুরের কারণে হয়ে থাকে। তবে শিশুদের শরীরে পানি জমার আরও কিছু কারণ রয়েছে, যেমন হার্ট ফেলুর, থাইরয়েড সমস্যা, রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি, লিভার সমস্যা এবং রক্ত কণিকার ক্যান্সার ইত্যাদি।
শরীরে পানি জমার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞান কিছু শারীরিক অবস্থাকে দায়ী করেছে। সুস্থ মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ৭০% পানি থাকে, যার একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে শরীরের কোষে থাকে। আমরা প্রতিদিন পানি পান করি, যা খাদ্যনালির মাধ্যমে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের জলীয় অংশ বাড়ায়। কিডনি রক্ত পরিশোধন করে শরীরের অপ্রয়োজনীয় এবং বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, লবণ এবং জলীয় অংশ প্রশ্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। ঘামের মাধ্যমেও শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়, এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও জলীয়বাষ্পের মাধ্যমে পানি চলে যায়। এইভাবে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে।
কিন্তু যদি কিডনি গুরুতর অসুস্থ হয়, তবে শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না, ফলে শরীরে পানি জমতে থাকে। হার্ট ফেলুরও পানি জমানোর প্রধান কারণ, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে। হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে, শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ হয় না, এবং কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এর ফলে প্রশ্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং শরীরে পানি জমে। রক্তশূন্যতা, যা শরীরের পানির ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয়, সেও শরীরে পানি জমানোর কারণ হতে পারে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে হার্ট ফেলুরের কারণে শরীরে পানি জমা একটি সাধারণ সমস্যা। হার্ট ফেলুরের কারণে কিডনির কাজও বিঘ্নিত হয়, ফলে শরীরে পানি জমে। এর ফলে পেট, পা, হাত ও মুখে পানি জমে ফুলে যায়। তাই এ ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে অবহেলা না করে সচেতন হওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।