অনেকে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করে আসছেন, কারণ এই সময় শরীরে হরমোনজনিত কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায়। ঘাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য অনেকেই ডিওডোরেন্টকে একমাত্র সমাধান মনে করেন। তবে কিছু মানুষের শরীরে দুর্গন্ধ হওয়ার চিন্তা থাকে না। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। ঘামের স্বাভাবিকভাবে কোনো কটু গন্ধ নেই; ঘামের বেশিরভাগ অংশই পানি, এবং কিছু উপাদান যেমন সোডিয়াম ও ক্লোরাইড থাকে। শরীরের ঘামের দুর্গন্ধের মাত্রা নির্ভর করে ঘর্মগ্রন্থির প্রকারের ওপর। শরীরে দুই ধরনের ঘর্মগ্রন্থি আছে—একটি হলো এক্রিন, যা গন্ধহীন ঘাম উৎপন্ন করে এবং সাধারণত গ্রীষ্মে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, অ্যাপোক্রিন গ্রন্থিগুলো বেশি দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত শরীরের যেসব স্থানে চুল থাকে, যেমন বগল ও কুচকিতে পাওয়া যায়।
অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন ঘাম ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। ক্লান্তি বা চাপের সময় এই গ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় হয়। এছাড়া কিছু রোগ যেমন ট্রাইমেথালামেনুরিয়া, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং লিভার ফেইলিওরও শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।
কিছু মানুষের শরীরে দুর্গন্ধ না হওয়ার কারণ জিনগত। বিশেষ করে পূর্ব এশীয়দের মধ্যে এবিসি১১ নামক একটি প্রোটিনের জিন ভ্যারিয়েশন আছে, যা তাদের ঘামে প্রোটিনের পরিমাণ কম রাখে। গবেষণা অনুযায়ী, পূর্ব এশীয়দের ৮৫-৯৫ শতাংশ এবং আফ্রিকান ও ইউরোপীয়দের মধ্যে ৩ শতাংশ এই জিন বহন করে।
এছাড়া খাদ্যাভাসের প্রভাবও রয়েছে। রেড মিট, অ্যালকোহল, পেঁয়াজ ও রসুনের মতো খাবার শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। যারা এসব খাবার এড়ান, তারা অন্যদের তুলনায় কম দুর্গন্ধের শিকার হন।
মানুষ নিজের ঘামের দুর্গন্ধ অনুভব নাও করতে পারে, কারণ মস্তিষ্ক নিজেদের গন্ধকে ছেঁকে ফেলে এবং পরিবেশের নতুন গন্ধের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। তাই যদি বন্ধুদের কাছ থেকে শোনেন যে আপনার শরীরে দুর্গন্ধ হচ্ছে, তবে সেটি সত্যি হতে পারে।
শরীরের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু উপায় হলো:
1. নিয়মিত গোসল করা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
2. ঢিলেঢালা ও বাতাস চলাচল করা পোশাক পরা।
3. প্রচুর পানি পান করা, যা ঘামকে পাতলা করে।
4. দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী খাবার কম খাওয়া।
5. ডিওডোরেন্ট ও অ্যান্টিপারসপিরেন্ট ব্যবহার করা।
6. বগল পরিষ্কার রাখতে বেনজাইল পারঅক্সাইড বডিওয়াশ ব্যবহার করা।
7. দুশ্চিন্তা ও অবসাদ কমানোর চেষ্টা করা, যা অ্যাপোক্রিন গ্রন্থির কার্যকলাপ কমাতে সাহায্য করে।