শর্ষে, যা ক্রুসিফেরি গোত্রের একটি উদ্ভিদ, এর বীজ থেকে পাওয়া যায় শর্ষের তেল। অতীতে শর্ষের তেলের ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও বর্তমানে সয়াবিন, পাম, সূর্যমুখী, অলিভ এবং ক্যানোলা তেল ব্যবহারের চল বৃদ্ধি পেয়েছে।
### শর্ষের তেলের উপকারিতা
শর্ষের তেল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এটি রক্তে খারাপ চর্বি কমায় এবং ভালো চর্বি বাড়ায়।
বাহ্যিক ব্যবহারে শর্ষের তেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, পিগমেন্টেশন কমায় এবং ত্বক মসৃণ করে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকে ব্যাকটেরিয়ারোধী সুরক্ষা দেয়।
চুলের জন্য শর্ষের তেলের ভিটামিন এ এবং ই সহায়ক। সপ্তাহে দুই দিন মাথায় মালিশ করলে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুল মজবুত হয়।
এতে থাকা আলফা লিনোলয়িক অ্যাসিড শরীরের ব্যথা কমায়, এবং সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় প্রাকৃতিক প্রতিকারক হিসেবে কাজ করে। আয়ুর্বেদে, রসুনের নির্যাস মিশিয়ে এ তেল শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।
### উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নায় সুবিধা
শর্ষের তেলের স্মোকিং পয়েন্ট প্রায় ৪৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হওয়ায় এটি রান্না ও ভাজার জন্য নিরাপদ। উচ্চ তাপমাত্রায় সাধারণত অন্যান্য তেল ভেঙে ট্রান্সফ্যাট তৈরি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
### কিছু সীমাবদ্ধতা
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ইউরোপে রান্নায় শর্ষের তেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ, কারণ এতে ইউরিসিক অ্যাসিড নামে একটি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরিসিক অ্যাসিড বেশি খেলে হার্টে চর্বি জমে; যদিও এ নিয়ে এখনও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
প্রাচীনকালে ঘানির মাধ্যমে ধীরে ধীরে তেল সংগ্রহ করা হতো, যা বিশুদ্ধ থাকত। তবে এখন দ্রুত প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত তেল ফিল্টার করতে হয়, এবং উৎপাদনের সময় অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়ায় কিছু গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়।
— মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল