**সেরোটোনিন: ভালো থাকার হরমোন**
শরীরে সেরোটোনিনের মাত্র ১% মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়, তবে এই এক শতাংশই আমাদের মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, এবং মনোভাবের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা নিউরোনের মধ্যে সিগন্যাল যোগাযোগের জন্য কাজ করে। নিউরন হলো স্নায়ু সিগন্যাল পাঠানোর কোষ, এবং মানুষের শরীরে ১০০টিরও বেশি নিউরোট্রান্সমিটার রয়েছে, যা স্নায়ুবিক সংকেতগুলো স্থানান্তরিত করে।
সেরোটোনিন হলো মনোএমাইন প্রকারের একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যার মধ্যে একটি অ্যামিনো থাকে। অন্যান্য মনোএমাইন নিউরোট্রান্সমিটারের মধ্যে ডোপামিন এবং নরএপিনেফ্রিন উল্লেখযোগ্য। এসব নিউরোট্রান্সমিটার আমাদের ইমোশন, যৌনতা, স্মৃতি ইত্যাদির সিগন্যাল প্রেরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেরোটোনিনের রাসায়নিক নাম ট্রিপ্টামিন, বা 5-hydroxytryptamine।
সেরোটোনিনের কাজ প্রধানত অন্ত্রে ঘটে, তবে মস্তিষ্কে এটি মুড, স্মৃতি, এবং শেখার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৯০% সেরোটোনিন তৈরি হয় অন্ত্রে, বিশেষ করে এন্টেরোক্রোমাফিন কোষে। শরীরের স্নায়ুবিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এন্টেরিক নার্ভাস সিস্টেম নামের একটি নার্ভ নেটওয়ার্ক রয়েছে, যেখানে সেরোটোনিনের বেশিরভাগ উৎপাদন হয়।
এছাড়াও, সেরোটোনিন অন্ত্রের মাসল মুভমেন্টে সাহায্য করে এবং রক্তের প্লেটলেটগুলোর মধ্যে ৮% সেরোটোনিন জমা থাকে, যা রক্ত জমাট বাঁধার কাজে সহায়তা করে। মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের কার্যকারিতা লক্ষণীয়, কিন্তু শরীরের মোট সেরোটোনিনের মাত্র ১% মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়।
সেরোটোনিন ১৯৪৮ সালে শরীরে প্রথম আবিষ্কৃত হয় একটি ভেসোকনস্ট্রিক্টর সাবস্টেন্স হিসেবে, এবং ১৯৫৩ সালে এটি নিউরোট্রান্সমিটার সাবস্টেন্স হিসাবে শনাক্ত করা হয়। সেরোটোনিনকে বলা হয় ভালো থাকার হরমোন বা সুখের হরমোন, তবে এর কার্যকলাপ শুধুমাত্র মস্তিষ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, খাদ্য নালিকে সাহায্য করা, এবং লিভারের পুষ্টি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা।
সেরোটোনিনের অভাব হলে মস্তিষ্কে ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে, আবার এর অতিরিক্ত মাত্রা রক্তচাপ বৃদ্ধি ও মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। স্বাভাবিক রক্তে সেরোটোনিনের মাত্রা ০১-২৮৩ ন্যানোগ্রামস পার মিলিলিটার (ng/mL)।
সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সূর্যের আলো, ব্যায়াম, এবং সেরোটোনিন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে। তবে সেরোটোনিনের বেড়ে যাওয়া একটি অবস্থা, সেরোটোনিন সিনড্রোম, সাধারণত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওভারডোজের কারণে ঘটে। এই অবস্থায় শরীরের সেরোটোনিন প্রসেস করার ক্ষমতার চেয়ে বেশি সেরোটোনিন জমা হয়, যার ফলে হাত-পা কাঁপা, অস্থিরতা, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, এবং মৃদু জ্বর দেখা দিতে পারে।
সেরোটোনিন সিনড্রোম থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের দেওয়া ডোজের বাইরে কোনো অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।