দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ২২:৩৭

শিশুর জলমাথা ও মেরুদণ্ডের সমস্যা

### অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য ফলিক অ্যাসিডের গুরুত্ব

 

অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ স্পাইনা বিফিডাসহ অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ছয় মাসের একটি শিশুর মাথা জন্মের পর ক্রমশ বড় হয়ে গেছে। এই শিশুর রোগের নাম **হাইড্রোকেফালাস**, যা মস্তিষ্কের গহ্বর বা ভেনট্রিকলগুলিতে অতিরিক্ত তরল জমার কারণে ঘটে।

 

অন্য একটি শিশুর পিঠে একটি বড় টিউমার রয়েছে এবং মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন অস্বাভাবিক শিশুটিকে তার মা-বাবা কাছে রাখতে রাজি হননি, ফলে তারা তাকে একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেন। শিশুটির সমস্যা হলো **স্পাইনা বিফিডা**, যা মেরুদণ্ডের ত্রুটির ফলস্বরূপ ঘটে।

 

দেশে এই দুই ধরনের ত্রুটিযুক্ত নবজাতকের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই পরিণতি মারাত্মক হয়ে থাকে। তবে সচেতন হলে এসব সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

### চিকিৎসা

 

শিশুর জলমাথা ও মেরুদণ্ডের রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। জলমাথার জন্য একমাত্র চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার। সান্ট অপারেশন বা ইটিভি—যেকোনো অস্ত্রোপচার জীবনের যে কোনো পর্যায়ে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ফলে শিশুটির জীবনে একাধিকবার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে শিশুটি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে।

 

স্পাইনা বিফিডা আরও ভয়াবহ জন্মগত সমস্যা। চিকিৎসার পরও অনেক রোগী আজীবন হুইলচেয়ারে জীবন কাটাতে বাধ্য হন। কিছু রোগীর জলমাথা, মুগুর পা বা ছিদ্রযুক্ত হার্টের সমস্যাও থাকতে পারে।

 

### প্রতিরোধ

 

– যেহেতু এসব রোগের চিকিৎসা জটিল ও ব্যয়বহুল, তাই প্রতিরোধই উত্তম। উন্নত দেশগুলো, এমনকি আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের মতো দেশে খাদ্যে ফলিক অ্যাসিড যোগ করে এ রোগের হার ৭০% পর্যন্ত কমিয়ে এনেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ স্পাইনা বিফিডাসহ অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি যেমন তালুকাটা, ঠোঁটকাটা, মুগুর পা ও হার্টে ছিদ্র প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

 

– গর্ভধারণের আগে থেকেই মাকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাতে হবে এবং দৈনন্দিন খাবারে ফলিক অ্যাসিড যুক্ত করতে হবে বা ফর্টিফায়েড করতে হবে।

 

– প্রতিরোধের এই উপায়টি তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম খরচে কার্যকর। তবে এর জন্য সদিচ্ছা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরি। প্রতি বছর ২৫ অক্টোবর বিশ্ব জলমাথা ও স্পাইনা বিফিডা দিবস পালিত হয়, যা মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের এই জটিল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

 

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের রোগের চিকিৎসা অপ্রতুল। তাই এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের সেবা দিতে **বাংলাদেশ হাইড্রোকেফালাস অ্যান্ড স্পাইনা বিফিডা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট** কাজ করছে। তবে এ রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।

 

**রেজিনা হামিদ**

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

নিউরোসার্জারি বিভাগ

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ