আপনার পরিচিত এমন কেউ কি আছেন, যিনি কখনো দুশ্চিন্তা করেন না? দুশ্চিন্তামুক্ত মানুষ খুঁজে পাওয়া ঠিক সেই সুখী মানুষের শার্ট খুঁজে পাওয়ার মতোই কঠিন। তবে কিছু অভ্যাসের কারণে মানুষ নিজের অজান্তেই আরও বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কী সেই অভ্যাসগুলো? চলুন এক নজর দেখে নেওয়া যাক। মানুষের মানসিকতার এই দিকটি কি আপনি জানেন?
অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) এর একটি মূল বৈশিষ্ট্য হল একই আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা বারবার মস্তিষ্কে ফিরে আসা। অজানা ভয়ে মানুষ ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়তে থাকে। এখান থেকেই অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার এবং প্যানিক ডিজঅর্ডারের মতো জটিলতাগুলো তৈরি হয়। কিন্তু জোর করে সেই আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা মস্তিষ্ক থেকে সরানোর চেষ্টা করবেন না। মানুষের মনস্তত্ত্বের একটি দিক হলো, সচেতনভাবে যেটা মনে করতে চাইবেন না, সেটিই বারবার ফিরে আসবে। তাই দুশ্চিন্তা সরানোর চেষ্টা না করে বরং অন্য কিছুতে মনোযোগ দিন। কোনো বিষয়েই নিজের মনের ওপর চাপ দেবেন না।
১. গড়িমসি করা
জীবনে শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হলো শৃঙ্খলার অভাব। বিশেষ করে যখন আপনি দুশ্চিন্তা বা হতাশায় ভুগছেন, তখন শৃঙ্খলা মেনে চলা জরুরি। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে কাজের সময়সূচি মেনে না চললে দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে এবং আপনি দুশ্চিন্তার চক্রে আটকে পড়বেন।
২. ভয় বা আশঙ্কার পক্ষে যুক্তি খোঁজা
মনে করুন, আপনার রাতে ঘুম আসছে না, আর আপনি এটা নিয়ে চিন্তিত। গুগল বা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ঘুমের সমস্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেন। এভাবে আপনি আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়বেন। আপনার আশঙ্কা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই ভয়ের পক্ষে যুক্তি খুঁজবেন না।
৩. নেতিবাচক মানুষের সঙ্গ
আপনার আশেপাশের মানুষ আপনাকে প্রভাবিত করে। নেতিবাচক মানুষদের সঙ্গে থাকলে আপনার দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। তাই চেষ্টা করুন ইতিবাচক মানুষের সঙ্গ বেছে নিতে।
৪. নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথোপকথন
কখনোই ‘যদি’ দিয়ে শুরু করা কোনো নেতিবাচক বাক্য শেষ করবেন না। ইতিবাচক চিন্তা করুন, কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের ৯০ শতাংশ দুশ্চিন্তাই অমূলক হয় এবং কখনোই ঘটে না।
৫. দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (হাইপারভেন্টিলেশন)
অ্যাংজাইটির শারীরিক লক্ষণগুলির মধ্যে হাইপারভেন্টিলেশন অন্যতম। এতে দ্রুত শ্বাস নেয়া ও ছাড়া হয়, যা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। ডিপ ব্রিদিং বা গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৬. ভয় বা দুশ্চিন্তার কারণ খুঁজে বেড়ানো
আপনি যদি ভয়ের মধ্যে থাকেন, তবে আপনার ভয় বাড়ানোর মতো কন্টেন্ট এড়িয়ে চলুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি হরর সিনেমা বা দুশ্চিন্তামূলক ভিডিও দেখে আপনি ভয় পান, তাহলে সেগুলো দেখবেন না।
৭. সকালে নাশতা না করা
নিয়মিত খাবার না খাওয়া রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ক্যাফেইন
অতিরিক্ত চা বা কফি খেলে ক্লান্তি বাড়বে এবং দুশ্চিন্তা ও হতাশা তীব্র হতে পারে।
৯. নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা
দুশ্চিন্তা বা বিষণ্নতার সময়ে নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা না করে বরং প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান। এটি দুশ্চিন্তা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
১০. অতিরিক্ত সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করা
অতিরিক্ত স্ক্রলিং আপনার মনের সমস্যাগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর পরিবর্তে সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন।