নির্মাণ ও অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিতেও সিদ্ধহস্ত আফজাল হোসেন। সময় পেলেই তিনি তার মনের কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। তার লেখায় এবার উঠে এসেছে দেশের অন্যতম সমস্যা—ট্রাফিক জ্যাম।বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় জ্যামের কারণে মানুষের জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে গেলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। অনেকের মতে, তখন জনজীবনে কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলেছিল। বর্ষীয়ান অভিনেতা আফজাল হোসেনও তেমনটাই বললেন।
আজ মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল, সে সময় অফিসের তিনতলা থেকে সে কার্যক্রম অবাক হয়ে দেখছিলাম। দেখছিলাম, আমাদের অনিয়মের শহরে কিভাবে নিয়ম মেনে চলা সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এই শহরের রাস্তায় কিভাবে চলাচল করে তা সকলেরই জানা। নিয়ম মানা কারও ধাতে নেই। দীর্ঘকাল ধরে অনিয়ম করতে করতে নিয়ম না মানা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে যত বেয়াড়া, সে তত স্মার্ট এই শহরে।”
অভিনেতা যোগ করেন, “রাস্তায় চলাচলের যত নিয়ম আছে, কেউই তা মানতে পছন্দ করে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, চাইলেই সব পারা যায়। মনে হলো, ‘বাঙালি শক্তির ভক্ত, নরমের যম।’ যে মানুষ যত উল্টোপাল্টা শহরজুড়ে করে, সেই মানুষ ক্যান্টনমেন্টে চলাচলের সময় ভদ্রলোকের মতো নিয়ম মানে। সেদিন ওপর থেকে দেখছিলাম, কেউ যদি এগোনোর জন্য একটু অনিয়ম করতে চাইতো, গাড়ির মাথাটা লাইন থেকে অল্প বের করে দিতে চাইতো, তবে সামনেই একটু দূরে কোনো ছাত্র দেখা গেলেই সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি জায়গামতো ফিরিয়ে নিয়ে ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছিল।”
তবে আফজাল হোসেন বলেছেন যে, বর্তমানে আবারও পুরনো জ্যামের চিত্র ফিরে এসেছে। এই পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “পথ চলা স্বাধীন করে দেওয়া হলো। আবার শহর ও মানুষ নিজেদের চলা-বলা ফেরত পেয়ে গেল। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছা মতো এবং বলছে যার যেমন ইচ্ছা।”
বাকস্বাধীনতা নিয়েও মন্তব্য করেছেন এই অভিনেতা। বিগত সরকারের সময় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। অতীতের স্মৃতি মনে করে আফজাল বলেন, “একসময় সবাইকে কথা হিসাব করে বলতে হতো। এখন যার যেমন খুশি বলা যায়। যখন বলার দরকার ছিল, বলা হয়নি। বিড়াল হয়ে কাটানো জীবনে হঠাৎ বাঘ হয়ে দেখানোর সুযোগ মিলেছে। এখন মানুষ নিশ্চিত, নিজের গলায় বাঘের গর্জন দিলে কারও চোখ রাঙানি দেখতে হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সভ্যতার ভব্যতার সীমা জানা নেই। অপমানজনক আচরণ ও কথাবলার দক্ষতা আমাদের সর্বজনবিদিত। এখন যেন বুক ফুলিয়ে অনুচিত কাজ করা যাচ্ছে। যেমন খুশি বলা ও করা হচ্ছে, মর্যাদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।”
নির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে আফজাল বলেন, “গতকাল একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অসম্মান করে কথা বলা একজন ব্যক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পর্দায় হাজির করা হলো। টেলিফোনে দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক দাবি করা মানুষটিকে বলতে শোনা গেল, সে তো কোনো অন্যায় করেনি।”
সবশেষে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই অভিনেতা বলেন, “দিনে দিনে নিশ্চয়ই আরও উন্নতি হবে। ইচ্ছা মতো নুন-মরিচ দিয়ে স্বাধীনতা চটকে আমরা অনেকেই বিচিত্র পদে ভর্তা বানিয়ে খেতে পারব। স্বাধীনতার ভর্তা বানানোর নানা রকম রেসিপি মুখস্ত করার মানুষের অভাব নেই। সেই বহুর জন্য রেসিপি বাজারজাত করে জনপ্রিয় হতে উৎসাহী মানুষ ও প্রতিষ্ঠানও কম নেই।”