“এই রিপোর্টার, তোমরা কোথায় আছো? আর সায়েরা বানু, তুমি কোথায় গেছো? সবাই লাঠিসোঁটা নিয়ে চলে এসো!”—ক্যানটিনের পাশে দাঁড়াতেই এমন উচ্চস্বরে কথাগুলো কানে এলো। মুহূর্তের মধ্যে ভিড় আরও বাড়ল। কেউ হাতে স্ট্যাম্প, কেউ লাঠি, আবার কেউ রড ধরে আছে। এর মধ্যে দুই পাশে সাংবাদিকরা দাঁড়িয়ে পড়লেন। প্রথম দেখাতেই মনে হলো, হয়তো কোনো সিনেমার শুটিং চলছে। কিন্তু পাশের একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এটা কোনো সিনেমা নয়, নাটকের শুটিং।
উচ্চস্বরে কথা বলা ব্যক্তিই ছিলেন নাটকের পরিচালক, আশিষ রায়। দীপ্ত টেলিভিশনের “দেনা পাওনা” নাটকের শুটিং হচ্ছিল। পরিচালক একজন অভিনেত্রীকে দেখেই বললেন, “এই সায়েরা বানু, তুমি যাচ্ছো কোথায়? তোমার সিন তো এরপরই।” পাশ থেকে একজন বললেন, “নাশতার বিরতি ছিল, তাই শিঙাড়া খাচ্ছিল।” সূর্যের আলো বাড়ছে–কমছে, তাই পরিচালক একটু তাড়াহুড়ো করছেন।
এবার পরিচালক দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যেখানে নায়কের বাবা ঋণখেলাপি হয়েছেন, ফলে অফিসের কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-বোনাস আটকে গেছে। ক্ষুব্ধ কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন। পরিচালক শ্রমিকনেতাদের একজনকে নির্দেশ দিলেন, “আপনারা খুব উত্তেজিত, হাতে লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসবেন। তখন নায়ক এরফান দাঁড়িয়ে বলবে, ‘আপনারা শান্ত হন, কথা বলতে চাই।’ তখন আপনি বলবেন, ‘কিসের কথা? কোনো কথা হবে না, যা হবে তা ফাটাফাটি হবে!’ তারপর দুই পা এগিয়ে আসবেন। এখন আমরা এই অংশের শুটিং করব।”
শুটিং ঠিকভাবে চললেও একজন সাংবাদিকের পারফরম্যান্সে সেরকম সিরিয়াসনেস ছিল না, ফলে আবার শুটিং করতে হলো। দীর্ঘদিন পর এফডিসিতে এত মানুষের শুটিং দেখছিলেন সবাই।
এক কর্মকর্তা জানালেন, এফডিসিতে এখনো আগের মতো শুটিং শুরু হয়নি, তবে শিগগিরই নীরবতা ভাঙবে বলে তাঁরা আশা করছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে প্রশাসনিক অফিস ছিল কর্মচঞ্চল, কিন্তু বেশিরভাগ রুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না। উৎপাদন বিভাগের পরিচালক রেজাউল হক বললেন, “সবাই আছেন, কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, কেউ কাজ ফাঁকি দিচ্ছেন না।”
শিল্পী সমিতির অফিসে কোনো চলচ্চিত্র শিল্পীকে দেখা যায়নি। অফিসের একজন জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই শিল্পী সমিতিতে তেমন কেউ আসেনি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল দেশে আছেন নাকি বিদেশে, সেটাও কেউ জানেন না। রুমের বেশ কিছু অংশজুড়ে ত্রাণসামগ্রী দেখা গেছে, তবে তা কেন বিতরণ করা হয়নি, তা অফিসের কেউ জানাতে পারেনি।
প্রযোজক সমিতির অফিসে সাংবাদিকদের বড় জটলা দেখা গেল। তারা অপেক্ষা করছিলেন ওমর সানীর জন্য। বেলা একটায় তাঁর সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, যানজটে আটকে পড়ায় শুরু করা সম্ভব হয়নি। আয়োজকদের একজন জানান, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড নিয়ে আলোচনা হবে। কিছু লোক সঠিক স্থানে বসানো হয়েছে, তবে এফডিসির কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন। এ নিয়েই কথা বলবেন ওমর সানী।