বাংলাপ্রেমী শিক্ষক, কবি, গবেষক, অনুবাদক ও প্রবন্ধিক উইলিয়াম রাডিচ আর নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু কবিতা, গল্প এবং মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর ইংরেজি ভাষান্তরে বিশেষ পরিচিতি লাভ করা রাডিচ ১১ নভেম্বর, তার জন্মদিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৫১ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী এই ব্রিটিশ শিক্ষক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (SOAS) বাংলার সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
রাডিচের মৃত্যু সংবাদ গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি কায়সার হক। তিনি জানান, রাডিচ নর্থ ইংল্যান্ডে বসবাস করতেন এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কায়সার হক আরও জানান, রাডিচে একসময় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তার লেখালেখির ক্ষমতা হারান। তবে দীর্ঘদিন পরে একে অপরের খোঁজখবর নেওয়া চলতে থাকে। কায়সার বলেন, “আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাডিচের সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগ হয়। শামসুর রাহমানের কবিতাগুলোর অনুবাদ নিয়ে রাডিচে কিছু রিভিউ লিখেছিলেন, যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।”
রাডিচের মা, বেটি রাডিচও ছিলেন ধ্রুপদী ল্যাটিন সাহিত্যকর্মের অনুবাদক এবং সম্পাদক। তার পূর্বপুরুষরা ইতালি থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ায় অক্সফোর্ডে ইংরেজি সাহিত্য পড়া শুরু করেন রাডিচে, এবং এর আগে তিনি ভারতীয় স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কলকাতা, দিল্লি, বেনারস ও চেন্নাই ভ্রমণ করেন এবং সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
রাডিচে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের SOAS-এ বাংলা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বাংলা শিখে সেখানেই তার শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়, এবং এটি বাংলা ভাষার প্রতি তার আগ্রহের আরেকটি কারণ হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘কণিকা’, ‘লিখন’, ‘স্ফুলিঙ্গ’সহ বেশ কয়েকটি অণুকবিতার ইংরেজি ভাষান্তর করেছেন রাডিচে। এছাড়া, তিনি গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি ভাষান্তরের মূল পাণ্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করেছেন। রাডিচের অনুবাদে ‘দেবতার গ্রাস’ (Snatched by the Gods) এবং ‘টুনটুনির বই’ (The Stupid Tiger and Other Tales) দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর গবেষণাও করেছেন তিনি, এবং তার অনুবাদ ‘The Poem of the Killing of Meghnad’ প্রকাশিত হয়েছে। উইলিয়াম রাডিচের বিশাল কর্মজীবনে বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতিফলন ঘটেছে, এবং তিনি ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে বাংলা সাহিত্য পৌঁছে দিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন।