**বিদেশ: এক অধরা স্বপ্নের নাম**
বিদেশের কথা শুনলেই মনে হয়, দেশের সীমারেখা পেরোলে যেন একটি জাদুকরি দুনিয়ার দরজা খুলে যাবে। আমাদের দেশের হাজারো সমস্যা থেকে মুক্তির পথ হল বিদেশ। অনেকেই প্রবাসী ট্যাগ নিয়ে দেশে ছেড়ে অজানার উদ্দেশে রওনা দেন, বিশেষ করে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, সত্যিই কি বিদেশে কোনো আলিবাবার খাজানা লুকিয়ে আছে? এর উত্তর আসলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। কারও জন্য এটি স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত, আবার কারও জন্য প্রথম কয়েক দিন কঠিন ও অচেনা হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ মানুষ নতুন দেশে এসে শুরুতে কাজ সাজিয়ে নিতে পারেন না। চলুন, জানি কিছু প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ যা আপনাকে বিদেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
**প্রথম অনুভূতি ও প্রস্তুতি**
বিমানবন্দরের গেট পার হলে এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে থাকে। পরিবারের সদস্যরা যখন দূরে চলে যায়, মনে হয়, এভাবে ঘরের বাইরে বের হয়ে ফেরত আসব কি না। কানের মধ্যে একটি নিরবচ্ছিন্ন শব্দ, বুকের মধ্যে প্রচণ্ড চাপ, আর চোখে অশ্রু—এই সময় নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মানসিক সংগ্রাম শুরু হয়। বিমানের জানালা দিয়ে দেশের সৌন্দর্য দেখার সময় বুকের ব্যথা যেন বাড়তে থাকে। কিন্তু ফিরে আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এই দিনের জন্য কত চেষ্টা ও পরিশ্রম! বিদেশে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে সাহস সঞ্চয় করুন।
**আবাসন ও খাদ্য**
বিদেশের প্রথম সমস্যা হলো আবাসন এবং বাঙালি খাদ্য। বিদেশে যাওয়ার আগে সেখানকার বাঙালিদের খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিচিত বাঙালিরা আপনার প্রথম দিকের রক্ষাকর্তা হয়ে উঠবে। আবাসনের ব্যবস্থা আগে থেকে করে আসা উচিত, এবং সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে আসা জরুরি। নতুন দেশে আসার পর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অতিরিক্ত অর্থ কাজে লাগবে।
বাঙালি খাদ্যের অভাব অনুভব করা কঠিন। বিদেশে আসলে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ কথাটি সত্যিই উপলব্ধি হয়। প্রথম কয়েকদিন খাবারের জন্য স্থানীয় বাঙালিদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে, কিন্তু পরে আপনাকেই নিজের খাবারের দায়িত্ব নিতে হবে। চেষ্টা করুন নতুন দেশের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হতে।
**প্রয়োজনীয় কাগজপত্র**
বিদেশে প্রথম দিনগুলোয় সব সময় পাসপোর্ট ও ভিসার কপি সঙ্গে রাখুন। নতুন দেশে যাওয়ার পর প্রথম কাজ হবে সিম কিনে নেওয়া। সিমের জন্য বিমানবন্দরের মধ্যেই সুযোগ থাকে। যদি আপনি পূর্ণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী হন, তবে সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলা খুব সহজ—শুধু পাসপোর্ট, ভিসা ও ভর্তি কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যান।
**যাতায়াত ব্যবস্থা**
বিদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সাধারণত গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। শুরুর দিনগুলোতে পাবলিক বাস বা ট্রেন ব্যবহার করা দরকার। পরিবহন ব্যবস্থার কার্ড কিনে টাকা ভরতে হবে। নতুন দেশে এসে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি দিয়ে দ্রুত নিবন্ধন করুন।
**পিএইচডি যাত্রা**
সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার পর শুরু হবে আপনার আসল পিএইচডি যাত্রা। বিদেশের পড়াশোনা ও কারিকুলাম ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এ জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনার মেন্টর বা সুপারভাইজারের সঙ্গে সমস্যা ভাগাভাগি করুন; সাধারণত তাঁরা সাহায্য করতে আগ্রহী।
মনে রাখবেন, আপনি একটি সম্মানজনক ডিগ্রি অর্জন করতে বিদেশে এসেছেন। এই শিক্ষা শুধু আপনাকেই জ্ঞানী করবে না, বরং আপনাকে উন্নতমানের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। পথের চড়াই-উতরাই থাকবেই, কিন্তু আপনার গবেষণালব্ধ ফলাফল মানবজাতির কল্যাণে সহায়ক হতে পারে। তাই শুভ চিন্তা নিয়ে শুরু করুন আপনার পিএইচডি যাত্রা।
*লেখক: তাসমিয়াহ সাদ সুতপা, সহকারী অধ্যাপক (অধ্যয়ন ছুটি), পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী, কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, অস্ট্রেলিয়া*