বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ৯৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। মঙ্গলবার মতিহার থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়, জানান মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক।
মামলার বাদী মোহাম্মাদ আহসান হাবিব, যিনি রাবি আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। তিনি বগুড়ার ধুনট উপজেলার নাংলু গ্রামে বসবাস করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদ-পদবীধারী নেতৃবৃন্দ রাবি শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের অবৈধ বলপ্রয়োগ এবং ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ১৬ জুলাই রাবি ক্যাম্পাসের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের জন্য সমবেত হলে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ছাত্রলীগের নেতারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ককটেল বিস্ফোরণের পরে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণনাশের ভীতি সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে, রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের করা মামলার বিরুদ্ধে তারা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছে। মামলায় ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করে ছাত্রদল প্রতিহিংসামূলক আচরণ প্রদর্শন করেছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রতিবাদলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তারা আশাবাদী যে, অন্ধকারাচ্ছন্ন এই পরিবেশে একদিন আশার আলো ফুটবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এই বানোয়াট মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখকৃত আসামিরা হলেন: সাকিবুল হাসান বাকি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, মো. আসাদুল্লাহ-হিল গালিব, শামীম ইমতিয়াজ, সারোয়ার হোসেন, মেজবাহুল ইসলাম, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, মইন উদ্দিন রাহাত, মেহেদী হাসান তায়েব, মামুন শেখ, নূর সালাম, আলতাফ সায়েম জেমস, আশিকুর রহমান আশিক, তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয়, ইমরান হোসেন, সামিউল আলম সোহাগ, শাখাওয়াত হোসেন শাকিল, জুয়েল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, আল মুক্তাদির তরঙ্গ, রাব্বিউল হাসান রুপক, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, মো. হাবিবুর রহমান মুক্ত, আল-আমিন, মিঠুন বকসী, গৌরভ শেখ বন্ধন, বুলবুল জোয়ার্দার, মিহাত, হাসান লাবন, সম্রাট, জাহিদ হাসান সোহাগ, মনু চন্দ্র মোহন দেব বর্মন বাপ্পা, ইসমাইল হোসেন, মোসাদেক সাজিদ, মাহফুজ আদিল, প্রণজিৎ, জামসেদ সবুজ, ভাস্কর সাহা, রিদওয়ান হৃদয়, আব্দুল্লাহ আল তাসরিফ, আবুল বাশার আহম্মেদ, শাকিল আহমেদ, ফরহাদ রেজা, শাকিল খান, মিনহাজুল আবেদীন, শামিম রেজা, কাইয়ুম মিয়া, প্রিন্স, পারভেজ মোশারফ, আল আমিন মোহাম্মদ তানভির, নিলয় কুমার সিংহ, রাহাত মাহমুদ, রাজ, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, রাশেদ খান, সাদেকুল ইসলাম সাদিক, সাহাবুদ্দিন শেখ স্পর্শ, সোহান, সৈকত, সৌমিক হাসান অরণ্য, শুভ্র দেব সাহা, আসিফ মাহমুদ ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিশু, কাবিরুজ্জামান রুহুল, মোস্তাফিজুর রহমান রাতুল, স্বাধীন খান, রাজিব হোসেন, তাসবিউল হাসান অপূর্ব, রামিম আহম্মেদ, শেখ কামাল বিন হারুন সিয়াম, আব্দুল্লাহ আল মারুফ নবাব, শুভ্র দেব ঘোষ, শামীম হোসেন, চিরন্তন চন্দ্র, মমিন ইসলাম, নিয়াজ মোর্শেদ শুভ, নাইম আলী, রেজা সাফায়েত, শফিউর রহমান রাধিক, মমিনুর রহমান মমিন, আশিকুর রহমান অপু, রাশেদ আলী, অপু মল্লিক, ফিরোজ, আবু সিনহা, অমিত হাসান, মাজহারুল ইসলাম মাজহার, মিনহাজুল ইসলাম ইভান, রিদওয়ান, সোহান, ওলিউল্লাহ রাজু, মাসুদ, খন্দকার শাহরিয়ার সৌরভ, আরিফুল ইসলাম আরিফ, তামিম, রায়হান হোসেন এবং রুহুল আমিন সরকার প্রিন্স।
তবে, ক্যাম্পাসের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলায় নাম উল্লেখকৃত ৯৮ জন আসামির মধ্যে অনেকেই ওই দিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না। এর মধ্যে সাবেক ও বহিষ্কৃত বেশ কয়েকটি নেতার নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মামলাটি আরও ভালোভাবে তদন্ত করে দায়ের করা উচিত ছিল, যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি ফিরে না আসে।