আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতের দূতাবাস কিছুদিন ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখার পর সীমিত আকারে পুনরায় চালু করেছে। বর্তমানে কেবল শিক্ষাগত এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য ভিসার আবেদন করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ফ্লাইটের সংখ্যা অর্ধেক কমে গেছে। বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের দূতাবাস ভারতে অবস্থিত হওয়ায় ইউরোপে পড়তে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সংকটে পড়ছেন। চিকিৎসার জন্য ভিসা পেতে আবেদনকারীদেরও সমস্যা হচ্ছে। সীমিত ভিসা প্রদান ব্যবসায়ীদের ওপরও প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে এয়ারলাইন্সগুলোর উপর। বাংলাদেশে তিনটি বিমান সংস্থা—নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স—ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে ভিসা জটিলতার কারণে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় দুইটি বিমান সংস্থার ফ্লাইট অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং একটি সংস্থার ফ্লাইট সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, যা আগে ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই এবং চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে সপ্তাহে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত, এখন দুইটি রুটে মাত্র ১২টি ফ্লাইট চালাচ্ছে। একই অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। এর আগে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে চলছে মাত্র ১৩টি ফ্লাইট। নভোএয়ারের ফ্লাইট ঢাকা-কলকাতা রুটে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ভিসা জটিলতার কারণে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছেন যে ভ্রমণকারীরা আগের ভিসা নিয়ে আসছেন। তবে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যদিও ভারত চিকিৎসা ভিসা দিচ্ছে, তবে চেন্নাইগামী ফ্লাইটের সংখ্যা সন্তোষজনক নয়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ইউরোপে পড়তে যাওয়ার জন্য ভারতের ভিসার অপেক্ষায় রয়েছেন, কারণ বাংলাদেশে ইউরোপীয় দেশের দূতাবাস নেই। ভারতে গিয়ে ওই দেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। তবে সম্প্রতি ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে এবং পরে সীমিত পরিসরে আবার শুরু করে।
সাধারণত ভারত ১৫টি ক্যাটাগরিতে ভিসা দেয়, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কেবল শিক্ষা এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে। ইউরোপের রোমানিয়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য কাজী কানিজ রাতুল অফার লেটার পাওয়ার পরও ভারতীয় ভিসা না পাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও ভিসা পাননি।
আফসানা শাহরিনের মতো অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও একই সমস্যায় পড়েছেন। ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে গিয়ে তারা অনেক সময় ব্যয় করছেন, কিন্তু সাফল্য পাচ্ছেন না।
মাসের প্রথম দিকে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে ভিড় দেখা গেলেও, ভারতে ভিসা কার্যক্রম সীমিত থাকায় ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা জানাচ্ছেন, আগে মাসে ১,২০০ থেকে ১,৫০০ আবেদন করা হত, বর্তমানে মাত্র ১০০টি আবেদনের সুযোগ মিলছে।
ভারত সরকার নিরাপত্তার কারণে ভিসা জটিলতা সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, দুই দেশের ব্যবসায় ও ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশিরা ভারতে কম যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সার্বিকভাবে, এই ভিসা জটিলতা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ব্যবসায়ীদেরও দুরবস্থার মধ্যে ফেলছে।