শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অপরিকল্পিত। জেলা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হলেও সে তুলনায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। এর ফলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।” তিনি আরো উল্লেখ করেন, “আমাদের একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রয়োজন। আমাদের সময় সীমিত, এবং আশা করি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।” গতকাল শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “আজকের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষকদের সম্মান দেওয়া। আমি শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি আগ্রহের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি; এটি চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। আমি জীবনব্যাপী শিক্ষকতা করেছি, তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।”
তিনি আরো বলেন, “স্কুল ও কলেজের অনেক বড় দাবিদাওয়া আমার কাছে এসেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে এগুলোর সমাধান দিতে পারিনি, তাই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। আমাদের দেশের শিক্ষকেরা, বিশেষ করে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের অবহেলা ও উপেক্ষা করা হচ্ছে। স্বল্প আয়ে সম্মান রক্ষা করে বেঁচে থাকা তাঁদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকতা পেশায় মনোযোগ দেওয়া কিভাবে সম্ভব?”
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বেসরকারি স্কুল ও কলেজের পরিচালনা বোর্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নিয়োগ-বাণিজ্য শোনা যেত। সব নিয়োগে এই সমস্যা বিদ্যমান। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কেন্দ্রীয়ভাবে যোগ্যতা নির্ধারণ করে পদায়নের ফলে শিক্ষকেরা পরিবার ছেড়ে দূরদূরান্তে চাকরি করতে বাধ্য হন। তারা নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। এই সমস্যা সম্পূর্ণরূপে সমাধান করা সম্ভব নয়, তবে আংশিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।”
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষকদের দায়িত্ব ও জবাবদিহির বিষয় রয়েছে। শিক্ষকের কিছু নৈতিক দায়িত্বরত থাকে, যা তাঁরা নিজ দায়িত্বে পালন করতে পারেন। শিক্ষকেরা দেখবেন যে ছাত্রছাত্রীরা ঠিকভাবে স্কুলে এসেছে কি না এবং তাদের কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। শিক্ষকদের ছাত্রদের সঙ্গে মমতাময়ী সম্পর্ক স্থাপন করলে অনেক কিছু সহজ ও সুন্দর হয়।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারি রাজস্ব আয় আন্তর্জাতিক মানের নিচে। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা যথাযথভাবে হচ্ছে না। সরকারি ব্যয়ে দুর্নীতি কমাতে পারলে এসব ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানো সম্ভব। এটি একদিনে হবে না, কিন্তু আমরা শুরু করেছি।”
শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমরা স্কুলের শিক্ষাক্রম নিয়ে দুরবস্থায় আছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট এবং নতুন দেশ গড়ার বিষয় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তবে আগামী বছরের শুরুতে পাঠ্যপুস্তক ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে হবে, তাই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের কারণে এটি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি, তবে আগামীতে এটির ব্যবস্থা করা হবে।”
তিনি অবশেষে বলেন, “আমাদের একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় শিক্ষানীতি থাকা প্রয়োজন। আমাদের সময় সীমিত, এবং আশা করি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের জন্য একটি আচরণবিধি থাকা দরকার, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের জ্ঞান ও বিবেচনার মাধ্যমে নিজস্ব আচরণবিধি তৈরি করতে পারে।”
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এস এম এ ফয়েজ, এবং ইউনেসকোর ঢাকা অফিসের প্রধান সুসেন ভাইজ প্রমুখ।