রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ৬ ঘণ্টার মধ্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার এবং আইন অনুষদের ডিনের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিভাগের সামনে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এই দাবি জানান।
এই সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘ধর্ষণকে সহায়তা করা ধর্ষণের সামিল’, ‘সেইভ আওয়ার ফিমেল স্টুডেন্টস’, ‘নিপীড়ক বাইরে কেন? প্রশাসনের জবাব চাই’, ‘ধর্ষকের শাস্তি চাই’ সহ নানা লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছিল। তবে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদ সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় তিনি সাদিকুল ইসলাম সাগরের পক্ষ নিয়েছেন। তাই তারা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ডিনের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জুলফিকার আহমেদ বলেন, ‘সাগরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা জরুরি মিটিং করেছি। সেখানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে তার বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই নিজেদের পদের অপব্যবহার করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাগর ছাত্রীদের প্রতি ধর্ষণের কারণে শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন ধর্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদের ভিসি স্যারকে ফ্যাসিবাদের দোসররা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। আমরা সত্য অনুসন্ধানের কাজে যারা বাধা দেয়, তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
অধ্যাপক ড. মুরশিদুল ইসলাম পিটার বলেন, ‘ছাত্রদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাগরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সে একাধিক ধর্ষণ করেছে। যদি সময় পেত, তাহলে সংখ্যাটা ১০০ অতিক্রম করত। আমাদের ডিন, যিনি সিন্ডিকেট সদস্য, তিনি বিভাগে ‘জিরো টলারেন্স’ বলে থাকেন, কিন্তু এত অভিযোগের পরও কেন তিনি সাদিকুল সাগরের বিষয়ে নীরব?’
অবস্থান কর্মসূচিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম, সহযোগী অধ্যাপক সালমা আখতার খানমসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আইন বিভাগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যৌন নিপীড়নের প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিয়েছে। তদন্তের জন্য যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়েছে। সাদিকুল সাগরের বিষয়ে বিভাগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে গৃহীত হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর না থাকলেও অন্যান্য দপ্তর ঠিকই কাজ করছে। যৌন নিপীড়ন সেল থাকলেও সেখানে সদস্যদের অভাব রয়েছে। আমি উপাচার্যকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি প্রথম কার্যদিবসে যৌন নিপীড়ন সেল নতুন করে গঠনের কথা জানিয়েছেন। আমাদের অপেক্ষা করা উচিত তদন্ত কমিটি গঠন হয় কি না। যদি না হয়, তবে আপনারা যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে একটি মিটিংয়ে আছি এবং তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানি না।’