দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৫:৩০

রুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা একটি স্বপ্নের মতো, তবে আপনি কিভাবে এই সুযোগ পেলেন?

– আমি প্রথমে বাংলাদেশে রুয়েটে শিক্ষক ছিলাম। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছি। এই সময়েই আমি মানসিক এবং একাডেমিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। পিএইচডি প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার আগেই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করি এবং তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রস্তাব পাই। এর মধ্যে নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিই। ২০২৩ সাল থেকে আমি সেখানে কর্মরত।

– আমার শিক্ষা জীবনের শুরু রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) থেকে, যেখানে ২০১৪ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করি। জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি (২০০৭) এবং জয়পুরহাট সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি (২০০৯) সম্পন্ন করি। এসএসসি ও এইচএসসিতে খুব ভালো ফলাফল ছিল না, তবে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের প্রতি আগ্রহ ছিল। রুয়েটে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও আমি স্নাতকে ৪৮৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়ে উত্তীর্ণ হই। স্নাতক শেষে আমার সিজিপিএ ছিল ৩.৯১, যা আমাদের বিভাগের সর্বোচ্চ ফল। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার সময় একাডেমিক ফলাফল ছিল ৪.০০/৪.০০। পিএইচডিতে ১০টি গবেষণার নিবন্ধ এবং দুটি পেটেন্ট প্রকাশিত হয়েছে যা আমার সিভি সমৃদ্ধ করেছে। দেশে থাকাকালে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম এবং একাডেমিক সংগঠনগুলোতে সক্রিয় ছিলাম। রুয়েটের অটোমোটিভ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ইউসাক প্রতিষ্ঠায়ও অংশ নিয়েছি।

**বিদেশে আপনার শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনের জন্য কতগুলো স্কলারশিপ ও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন?**

– দেশে ও বিদেশে ১৫টির অধিক স্কলারশিপ ও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, বেশিরভাগই আমার মাস্টার্স এবং পিএইচডির সময়। উল্লেখযোগ্য স্কলারশিপের মধ্যে সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিনস স্কলারশিপ, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুলিস স্কলারশিপ এবং কুইবেক প্রাদেশিক সরকারের সর্বোচ্চ ফান্ড-ডি-রিসার্চ-নেচার অ্যাট টেকনোলজির (এফআরকিউএনটি) ডক্টরাল রিসার্চ স্কলারশিপ অন্তর্ভুক্ত। অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক এবং রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক পাওয়া উল্লেখযোগ্য। বিদেশে গ্র্যাজুয়েট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড এবং বিভিন্ন কনফারেন্সে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ডও রয়েছে।

**পড়াশোনা শেষে প্রথম চাকরির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?**

– পড়াশোনা শেষে ২০১৫ সালে রুয়েটে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার কারণে এটি প্রত্যাশিত ছিল। এই সময় থেকেই আমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকতা শুরু করি।

**বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নের শুরু কিভাবে হয়েছিল?**

– বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ভালো ফলাফলের পর সবার পরামর্শ ছিল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হব অথবা উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশে যাব। তখন থেকেই বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা ও চাকরির স্বপ্ন শুরু হয়। বিদেশে আবেদন করার প্রক্রিয়া ও বিদেশি প্রফেসরদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে পরিচিত শিক্ষক ও সিনিয়রদের কাছ থেকে শিখেছি।

**বর্তমানে আপনার কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।**

– আমি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাগ্রিকালচার, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এটি একটি পাবলিক, ল্যান্ড গ্র্যান্ড, সি-গ্র্যান্ড এবং স্পেস গ্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্য বেস্ট ভ্যালু পাবলিক ইউনিভার্সিটির মধ্যে ৭ নম্বরে র‌্যাঙ্ক করা হয়েছে। এখানে দুটি ক্যাম্পাস যুক্তরাষ্ট্রে এবং একটি ক্যাম্পাস ইতালিতে রয়েছে। আমি মেইন ক্যাম্পাস ডুরহাম শহরে কাজ করছি, যা বোস্টন শহর থেকে ৫০-৫৫ মিনিটের দূরত্বে।

**যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতা করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে?**

– একেবারে ভিন্ন কালচার ও সংস্কৃতিতে শিক্ষকতা করা কঠিন ছিল। তবে আমি এটিকে শেখার ও বোঝার সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। শিক্ষার কারিকুলাম, শিক্ষার্থীদের মনোভাব, শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক, সহকর্মী সম্পর্ক এবং অন্যান্য বিষয় বোঝা নতুন শিক্ষা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সব কিছু জবাবদিহির আওতায় থাকে, যেমন একজন ছাত্রের খারাপ ফলাফলের কারণ এবং অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়। এই নতুন সিস্টেম বুঝতে আমার সময় লেগেছে। ট্যানুর ট্র্যাক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে শুরু করতে গিয়ে নিজেকে পরিচালনা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

**বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চাওয়া ব্যক্তিরা কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবেন?**

– আন্তর্জাতিক পদগুলোর জন্য উপস্থাপনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির জন্য দীর্ঘ প্রতিযোগিতা ও প্রক্রিয়া থাকে। সিভি জমা দেওয়ার পর, নির্বাচিত প্রার্থীদের অনলাইন ইন্টারভিউ ও অন-ক্যাম্পাস ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউয়ের সময় রিসার্চ আইডিয়া, ক্লাস নেওয়ার ধরন, কারিকুলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা পরীক্ষা করা হয়। সার্চ কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে চার থেকে ছয় মাস সময় লাগে।

**বিদেশে পড়াশোনা ও চাকরি করতে চাইলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?**

– বিদেশে পড়াশোনা ও চাকরির জন্য ইচ্ছা ও লক্ষ্য স্পষ্ট রাখা জরুরি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, নিজস্ব ফিল্ডে সুযোগ খোঁজা ও ইংরেজিতে ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন করা প্রয়োজন। বিদেশি প্রফেসররা একাডেমিক এক্সিলেন্স, রিসার্চ পটেনশিয়াল এবং লিডারশিপ কোয়ালিটি যাচাই করেন। চাকরির ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পটেনশিয়াল ও লিডারশিপ স্কিল গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশিদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন পরিবেশ ও সিস্টেমে মানিয়ে নেওয়া।

**বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও চাকরি করতে চাইলে কখন থেকে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?**

– প্রথমত, লক্ষ্য স্থির করে যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এইচএসসি বা অনার্সের প্রথম দিকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও স্কিল উন্নয়ন, যোগাযোগ দক্ষতা এবং লিডারশিপ স্কিল বাড়ানো দরকার। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেশা এবং স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া উচিত। এছাড়া, যে দেশে যেতে চান, সেই দেশের ভাষা ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য বুঝে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট