পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের বিষাক্ত ধোঁয়ার ঝাঁঝে আমার নাক ও চোখ প্রচণ্ড জ্বলছিল। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বড় রাস্তা-সংলগ্ন ফুটপাতে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম, তুই বুকে গুলি খেয়েছিস। কোনো ঝক্কি-ঝমেলা না ভেবে তোর কাছে ছুটে গেলাম। অ্যাম্বুলেন্সে সিটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তুই আমার দিকে তাকালি। তোর চোখের অব্যক্ত চাহনী দেখে মনে হচ্ছিল, চোখের মণি ঠিকরে বাইরে আসতে চাইছে। তোর চোখের চাহনিতে ছিল পতিত স্বৈরাচারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ঘৃণা। হঠাৎ তোর চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেলো চিরতরে। আমার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে গেল। কাঁদতে চেয়েও পারিনি। তোর চিরবিদায়ের পর, তিন সপ্তাহ ধরে ঘুমাতে পারছি না। ঘুম এলেই তোর চোখের সেই চাহনী স্বপ্নে ভেসে ওঠে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথা জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ ফারহান ফাইয়াজের সহপাঠী ওয়াসিফ মুনিম। ১৮ জুলাই ফারহান ও ওয়াসিফ ধানমন্ডি এলাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আক্রান্ত হয়। ফারহান শহিদ হয়, ওয়াসিফ বেঁচে যায়। ফারহানের মৃত্যু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। মুনিম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ফারহানের চোখের চাহনীর স্মৃতি তাকে প্রতিদিন কষ্ট দেয়।
শহিদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা শহীদুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, “সন্তান হারানোর শোক পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী কষ্ট।” ফারহানের স্বপ্ন ছিল পদার্থবিদ হয়ে দেশের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। মৃত্যুর আগের রাতে পিৎজা খেতে পছন্দ করেছিল। তার মৃত্যু দেশের জন্য নতুন স্বাধীনতার আভাস এনে দিয়েছে।