দ্যা নিউ ভিশন

নভেম্বর ২৫, ২০২৪ ০৩:৪২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা যে পরিবর্তন আশা করছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলটি বেশ বড়। এর ভিতরে প্রবেশ করলে দুটি ১১ তলা ভবন দেখা যায়। বাঁ দিকের ভবনটি পদ্মা ব্লক নামে পরিচিত। নিচতলায় হল সংসদের কক্ষ। ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই কক্ষটি ফাঁকা পড়ে ছিল এবং দেয়ালে ভাঙচুরের চিহ্ন ছিল। একসময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই কক্ষে আড্ডা দিতেন, যাদের ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই পথে যেতেন না।

 

পদ্মা ব্লকের ৭০১০ নম্বর রুমটি ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার দখলে ছিল। বর্তমানে সেখানে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। নতুন বাসিন্দা মো. রিপন খান বলেন, ‘আমি ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। প্রথমে গণরুমে ছিলাম। ২০১৯ সালে হল প্রশাসন আমাকে এই কক্ষে বৈধ আসন বরাদ্দ দেয়। তখনও এখানে উঠতে পারিনি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নিজের বৈধ আসনে থাকতে পারছি, এতেই আমি খুশি।’

 

তেমনি, পাশের জসীম উদ্‌দীন হলের চিত্রও কিছুটা অনুরূপ। ২০৮ নম্বর রুমটি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীকে রাখা হতো। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চারটি বিছানায় সাতজন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন।

 

জুলাই বিপ্লবের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শিক্ষার্থীরা আবারও ফিরে আসেন।

 

পুরানো সময়ের ‘গেস্টরুম কালচার’ এবং ‘গণরুম কালচার’ এখন আর নেই। হলের খাবারের দোকান ও ক্যানটিনে চাঁদাবাজি এবং সিট বাণিজ্যের সমস্যা কমে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলের মধ্যে ১৪টি ছাত্রদের এবং ৫টি ছাত্রীদের জন্য। নতুন আসন বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্য কমানো হবে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশা করছেন।

 

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে আসন বণ্টন সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হল খোলার পর আসন বণ্টন সুষম হয়েছে এবং গণরুম, গেস্টরুম কালচার বিদায় নিয়েছে।’

 

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভয় কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা এখন মুক্তভাবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে পারছে। হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।’

 

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আসন সংকট ছিল। বর্তমানে প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা তৎপরতা দেখাচ্ছে।

 

প্রশাসনের চাপে ফজলুল হক মুসলিম হলের পূর্বের অবৈধ অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এখন বৈধ আসন পেয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট।

 

সব হলেই পরিবর্তন একযোগে আসেনি, তবে বেশ কিছু জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। নবনিযুক্ত উপাচার্য এবং হল প্রশাসন বেশ কিছু সমস্যা দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মুহসীন হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, ‘সুষম আসন বণ্টন শিক্ষার্থীদের সমস্যার বড় অংশ সমাধান করবে।’

 

এ সময় শিক্ষার্থীরা আশা করেন, সংস্কারের এই প্রক্রিয়া চলমান থাকুক এবং পুরনো অশুভ সংস্কৃতিগুলো আর ফিরে না আসুক।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ঝলমলে আইপিএল নিলামের অন্য রূপ: কালো তালিকা, রাতারাতি কোটিপতি আর ক্ষমতা প্রদর্শন

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ললিত মোদি। ভারতীয় ক্রিকেট