বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, সারা দেশে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়া এবং জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর প্রতিবাদসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি। শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালে ২২ দিনব্যাপী আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও অতি বাড়াবাড়ির কারণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়াসহ অনেক শিক্ষক আহত হন এবং একজন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন।
এ সময় শেখ কাওছার আহমেদ অভিযোগ করেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বিরোধিতার ফলে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, যা হাইকোর্ট কর্তৃক স্থগিত করা হলেও চাকরিতে ফিরতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণসহ বেশ কয়েকটি দাবিকে যৌক্তিক বলে বিবেচিত করা হয় এবং এসব দাবির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে দুঃখের বিষয়, সে প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি।”
তিনি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যা নিম্নরূপ:
1. **মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ**
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূর করে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে হবে।
2. **যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রবর্তন**
বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন করে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।
3. **ভাতা সমতা**
সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।
4. **বেতন স্কেল উন্নীতকরণ**
বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল সরকারি স্কুলের মতো উন্নীত করতে হবে।
5. **বদলি প্রথা চালু**
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি প্রথা চালু করতে হবে।
6. **পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন**
সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং অবসর সুবিধা দ্রুত প্রদান করতে হবে।
7. **চাকরির বয়স বৃদ্ধি**
শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৬৫ বছরে উন্নীত করতে হবে।
8. **শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন**
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতো শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন করতে হবে।
9. **জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন**
শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
10. **ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্তি**
সরকারি স্কুলের মতো বেসরকারি স্কুল পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে।
11. **এমপিওভুক্তির সম্প্রসারণ**
স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।