জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি নিহতের ঘটনায় ৮ দফা দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। শিক্ষার্থীরা ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশদ্বারে তালা লাগিয়ে দেন, যার ফলে কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে ঢুকতে বা বের হতে পারেনি। অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা “আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে”, “আমরা সবাই রাচির ভাই, রাচি হত্যার বিচার চাই”, এবং “আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে?”—এমন নানা স্লোগান দেন।
**শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:**
1. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাচির মৃত্যুর ঘটনায় যথাযথ তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা।
2. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সড়কবাতি, ফুটপাত, এবং গতিরোধক স্থাপন করা।
3. যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গতিমাপক ব্যবস্থা চালু করা।
4. নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান।
5. মেডিকেল সেন্টারের জরুরি সেবার মানোন্নয়ন।
6. নিবন্ধনবিহীন যানবাহন ক্যাম্পাসে চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
7. রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণপূর্বক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা।
8. অদক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের অপসারণ এবং ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ক্যামেরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সচল করা।
**শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া:**
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দুর্বার আদি বলেন, “প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল ক্যাম্পাসে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। রাচির ক্ষেত্রে এটি ঘটেনি। এটি প্রশাসনের ব্যর্থতা। ক্যাম্পাসে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণেও কোনো উদ্যোগ নেই।”
ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লামিশা জামান বলেন, “রাচির মৃত্যুকে আমরা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করছি। নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে আট দফা দাবি জানিয়েছি এবং সেই দাবিতে আজকের কর্মসূচি পালন করছি।”
**প্রশাসনের পদক্ষেপ:**
রাচির মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বাবুল, নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল মিয়া, সহকারী সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, এবং ডিউটি গার্ড মনসুর রহমান প্রামাণিক।
**ঘটনার পটভূমি:**
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনার সংলগ্ন নতুন কলাভবনের সামনে দ্রুতগামী একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় রাচি গুরুতর আহত হন। মাথা ও মুখে গুরুতর আঘাত নিয়ে তাকে জাহাঙ্গীরনগর মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়, সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাচি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং তার বাড়ি শেরপুর জেলায়।