নানা কারণে আলোচনা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রম। সেই শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও মূল্যায়ন হবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে। অর্থাৎ আগের মতো সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান দেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে এ বছর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পায়নি। তবে, আগামী বছর দশম শ্রেণিতে তারা এই সুযোগ পাবে। দুই বছরের পরিবর্তে এক বছরে সিলেবাস শেষ করার জন্য সিলেবাসও সংক্ষিপ্ত করা হবে। এছাড়া, আগামী শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন ও সংশোধন আনা হবে।
আজ রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি যতটা সম্ভব আগের জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর মতো করা হবে।
জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের শিক্ষাবর্ষ হবে ছয় মাসের। প্রতি ছয় মাসে একটি সাময়িক পরীক্ষা হবে, অর্থাৎ প্রতি শিক্ষাবছরে দুটি সাময়িক পরীক্ষা নেওয়া হবে।
গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ, ও সপ্তম শ্রেণিতে ২০২২ সালের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়, যা নতুন শিক্ষাক্রম হিসেবে পরিচিত। এ বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম, ও নবম শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বছর শেষে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের ধারাবাহিকতা রেখে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি যতটা সম্ভব আগের জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর মতো করা হবে।
এছাড়া, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও আগামী বছর থেকে সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। চলতি বছরের সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতি অর্থাৎ পুরোনো নিয়মে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এসব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপরেখা শিগগিরই বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে চলতি বছরের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পায়নি। আগামী বছর দশম শ্রেণিতে তারা এই সুযোগ পাবে।
নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পরবর্তী বছর ২০২৬ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে আগের কারিকুলামের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে একটি শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করতে পারে সেজন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হবে।
যেসব শিক্ষার্থী ২০২৫ সালে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক প্রদান করা হবে। এই শিক্ষার্থীরা নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
২০২৬ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে পাঠদান করানো হবে উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ সাল থেকে পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, “যেসব শিক্ষার্থী ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ডিসেম্বরে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিবে। তবে বই একই থাকবে। এ বিষয়ে খুব দ্রুত তাদের কাছে নির্দেশনা পৌঁছে যাবে। তাদের টেনশনের কোনো কারণ নেই।”