শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ পেয়ে তাও ব্যবহার করতে না পারায় আমরণ অনশনে বসেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রশাসন ভবনের সামনে তাঁরা এই অনশন শুরু করেন। এর আগে তাঁরা বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল ৪টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অনশন চলছিল। দাবির প্রতি প্রশাসনের অঙ্গীকার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, “আমরা শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ পেয়েও ব্যবহার করতে পারছি না। কক্ষগুলো ফোকলোর ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দখলে রয়েছে। আমাদের ক্লাস পরীক্ষা পরিচালনার জন্য কোনো জায়গা নেই, এমনকি আমাদের নতুন চেয়ারম্যানকে বসানোরও জায়গা নেই। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের বিভিন্নভাবে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু কিছু হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি। প্রশাসন লিখিত পদক্ষেপ না নেয়া পর্যন্ত আমরা এই অনশন চালিয়ে যাব।”
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, “উপাচার্য ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরে এলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমি দুপুরে আন্দোলনকারীদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। আমরা একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় ২৩টি এবং পঞ্চম তলায় ১টি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়। একই সাথে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে ১৫টি ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগকে ১৭টি কক্ষ বরাদ্দ করা হয়। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এই বরাদ্দের সিদ্ধান্ত দেন।
গত আগস্টে অনুষদীয় সভায় কক্ষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। তবে কক্ষ বরাদ্দের আগে থেকেই ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ভবনের চতুর্থ তলায় চারুকলার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো দখল করে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কক্ষ বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও চারুকলার জন্য কম কক্ষ বরাদ্দ দেয়ায় ফোকলোর ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে নারাজ।
এদিকে, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের জন্য ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় কক্ষ বরাদ্দ করা হলেও তারা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত তৃতীয় তলায় কক্ষগুলো দখল করে রেখেছে।
এ নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। তখন উপাচার্য তাদের দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু সপ্তাহ পেরোলেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় রবিবার ফের আন্দোলন শুরু করে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও সমাধান না পেয়ে সোমবার অনশনে বসেছেন তাঁরা।