দ্যা নিউ ভিশন

মার্চ ৩১, ২০২৫ ১৫:৩৩

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একের পর এক ডাকাতি, আতঙ্কিত চালক ও যাত্রীরা চান নিরাপত্তা

গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কেওঢালা এলাকায় র‌্যাব পরিচয়ে একদল লোক বাস থামিয়ে প্রবাস থেকে আসা দুই যাত্রীকে নামিয়ে নেয়। এরপর মাইক্রোবাসে তুলে সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়।

একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। দিনে-রাতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও চলছে ডাকাতি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও ৫ আগস্টের পর তা বেড়েছে। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক ও স্থানীয় তৈরি পোশাকশ্রমিকেরা বেশি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘ঝামেলা এড়াতে’ মহাসড়কে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না। অনেক সময় পুলিশও ডাকাতির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা কিংবা শুধু জিডি নিয়েই দায় শেষ করেন। কিছু ঘটনায় হওয়া মামলায় ডাকাত দলের সদস্যরা ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আসামিরা আবার ডাকাতিতে জড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাওয়া যায়নি। তবে এই মহাসড়কে চলাচলকারী কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকেরা নিজেদের ভার্চ্যুয়াল গ্রুপে শেয়ার করা তথ্যের বরাত দিয়ে বলছেন, গত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি। অপর দিকে শেষ ছয় মাসে ঢাকা–চট্টগ্রামসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ এলাকার মাইক্রোবাসচালক সাদেকুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চালকদের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। কারণ, ডাকাত দল যাত্রীদের সর্বস্ব নিয়ে পালানোর সময় কৌশলে চালকদেরই অপরাধী বানাচ্ছে। এতে চালকেরা বিনা অপরাধে আইনি ঝামেলার শিকার হচ্ছেন। আমরা নিরাপদ মহাসড়ক চাই।’

ঘটনা অনেক, মামলা কম

থানাগুলো থেকে পাওয়া পুলিশের হিসাব বলছে, গত ছয় মাসে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানায় ১৩টি, বন্দরে ৪টি ও আড়াইহাজারে ২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ছয় মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় চারটি ছিনতাই মামলা হলেও সোনারগাঁ থানায় কোনো মামলা হয়নি। যদিও এ সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ অংশে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। গত ৮ ডিসেম্বর সোনারগাঁর মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেলসহ নেতাদের বহনকারী একটি গাড়িতে ডাকাত দল আক্রমণ করে। এ সময় নেতাদের মারধর করে মালামাল লুটে নেওয়া হয়।

এত কষ্ট করে বিদেশে অর্থ উপার্জন করেছি, কিন্তু ঘরে ফিরেছি শূন্য হাতে। ঘরে আমার দুইটা ছেলে, তাদের জন্য একটা চকলেটও আনতে পারিনি। সেদিন মনে হচ্ছিল প্রাণটা নিয়ে অনেক কষ্টে ঘরে ফিরেছি

ছিনতাইয়ের শিকার মো. আবু হানিফ, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের প্রবাসী

মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা বিচার করা যাবে না বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক ও বর্তমান দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে আসে। মামলা হয় আরও কম। কোনো ক্ষেত্রে ডাকাতির মামলা না নিয়ে চুরি কিংবা ছিনতাই মামলা নেওয়া হয়। কখনো আবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে ভুক্তভোগীদের থানা থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে প্রতিনিয়ত মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি হলেও পুলিশের খাতায় তার সামান্যই উল্লেখ থাকে।

মহাসড়ক এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডাকাতি কিংবা ছিনতাইয়ের শিকার যাত্রীরা ভয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়েন। আদালত ও থানার হয়রানির ভয়ে তাঁরা মামলা এড়িয়ে যান। বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটলে মামলা হয়। এরপর পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করলেও দ্রুতই তাঁরা জামিনে বের হয়ে আবার ডাকাতিতে জড়াচ্ছেন।

সম্প্রতি মহাসড়ক–সংলগ্ন দোকানপাটেও ডাকাতির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মহাসড়ক–লাগোয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়ারবাজার মসজিদ মার্কেটের প্রীতি জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দোকান থেকে প্রায় ২৫ ভরি সোনা লুট করে নিয়ে যায় সাত-আটজনের ডাকাত দল। পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতের গুলিতে এক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। তবে ব্যবসায়ীরা ধাওয়া করে কাওসার আহমেদ (৩৫) নামের এক ডাকাত সদস্যকে আটক করে।

কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়ক–সংলগ্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মানুষকে লক্ষ্য করেই তারা ছিনতাই-ডাকাতি করে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আতঙ্কিত যানবাহন চালকেরা চান নিরাপত্তা

প্রতিনিয়ত ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে ২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন হালকা মোটরযানের চালকেরা। ওই দিনের কর্মসূচির অগ্রভাগে ছিলেন ইলিয়টগঞ্জ বাজার এলাকার প্রাইভেট কারের চালক মো. রাসেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ ডাকাতের কবলে পড়ে সব হারালেও মামলা করতে চান না। এর মূল কারণ হচ্ছে, মানুষ মনে করে, মামলা করে শেষ পর্যন্ত কোনো মালামালই পাওয়া যায় না। উল্টো মামলার বাদী হয়ে আইনি বিভিন্ন ঝামেলায় পড়তে হয়।

ওই এলাকার প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের চালকদের হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল গ্রুপ আছে। কোনো চালক ডাকাতের কবলে পড়লে তাৎক্ষণিক এসব গ্রুপে জানিয়ে থাকেন। ওই গ্রুপের বরাত দিয়ে মো. রাসেল বলেন, কাঁচপুর থেকে চান্দিনা এলাকার মধ্যে গত ছয় মাসে অন্তত ১০০ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের কর্মসূচির পরও ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতেও দাউদকান্দি এলাকা, গজারিয়ার ভরেরচর, সোনারগাঁর মোগরাপাড়াসহ চার স্থানে ডাকাতি হয়েছে।

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি প্রতিরোধে কাজ করছি। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকেও বলা হয়েছে রাতে মহাসড়কে টহল বৃদ্ধি করার জন্য। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা দিনরাতে কাজ করছেন, কোথাও তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ইলিয়টগঞ্জ এলাকার মাইক্রোবাসচালক সাদেকুর রহমান বলেন, মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চালকদের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। কারণ, ডাকাতেরা যাত্রীদের সর্বস্ব নিয়ে পালানোর সময় কৌশলে চালকদেরই অপরাধী বানাচ্ছে। এতে চালকেরা বিনা অপরাধে আইনি ঝামেলার শিকার হচ্ছেন।

দেড় থেকে দুই মিনিটের মিশন

নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী চালক, যাত্রী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে মহাসড়কগুলোতে গাড়ির চাপ বাড়লে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তখন কখনো ধীরগতিতে আবার কখনো থেমে থেমে গাড়ি চলাচল করে। ওই সময় ডাকাতেরা সাধারণত ঢাকা থেকে আসা প্রবাসী যাত্রী বহন করতে পারে, সম্ভাব্য এমন প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোকে লক্ষ্য করে অস্ত্র নিয়ে দল বেঁধে হামলা চালায়। মুহূর্তেই তারা গাড়ির কাচ ভেঙে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সবকিছু লুটে নেয়। পুলিশ বলছে, দেড় থেকে দুই মিনিটে তারা ডাকাতি শেষ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

মামলার নথি বিশ্লেষণ, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা–সিলেট ও এশিয়ান বাইপাস মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রূপগঞ্জ থানার আওতাধীন তিনশো ফিট, কাঞ্চন সেতু, গোলাকান্দাইল, তারাব সেতু, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে সানারপাড়, কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম অংশ, বন্দরের মলিবাগ, মদনপুর ও কেওডালা, আড়াইহাজারের বান্টি এবং সোনারগাঁ থানার কাঁচপুর, দড়িকান্দী, টিপরদী, সাদীপুর, মোগড়াপাড়া, আষাড়িয়ারচর ও মেঘনা টোল প্লাজা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অপর দিকে কুমিল্লা অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে দাউদকান্দি ও চান্দিনা থানা এলাকা, বুড়িচংয়ের নিমসার, কালাকচুয়া, সৈয়দপুর এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রামের কয়েকটি এলাকায় এসব ঘটনা বেশি ঘটছে।

১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) দুপুরে সোনারগাঁর কাঁচপুর এলাকার অন্তত ছয়জন কারখানা শ্রমিকের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। এই ছয়জনের দুজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাকি চারজন জানিয়েছেন, তাঁদের পরিচিত শ্রমিকেরা রাতবিরাতে সড়কে চলাচলের সময় মহাসড়কে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। মো. খোরশেদ আলম নামে প্রাইভেট কারের একজন চালক বলেন, ‘রাতে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সাহস হয় না। বাধ্য হইয়া বের হইলে কাঁচপুর থেইকা দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রচণ্ড ভয়ে থাকি।’ হাইওয়ে পুলিশ বলছে, নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কগুলোতে সক্রিয় ডাকাত দলগুলোতে প্রধানত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, বন্দর, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও নরসিংদীর মাধবদী এলাকার ডাকাত সদস্যরা যুক্ত রয়েছে। অভিনব পদ্ধতিতে একেক দিন তারা একেক জায়গায় ডাকাতি করে।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের মহাসড়কগুলোতে বছরের পর বছর ধরে ডাকাতি–ছিনতাই চলছে। অপরাধীরা মূলত প্রবাসীদের গাড়িতে ডাকাতি করে। গাড়ির চাপের কারণে যখনই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে, তখনই এসব অপরাধী একযোগে গাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। ৫ আগস্টের পর চিহ্নিত এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ টহল শুরু করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ডাকাত সরদারও গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু বারবার তাঁরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন।

ঢাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি রাত তিনটার দিকে ডেমরা হয়ে কাঁচপুরের দিকে ঢুকতেই ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কংসনগর এলাকার প্রাইভেট কারের চালক মো. হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ডাকাদের অনুরোধ করি গাড়ি না ভাঙার জন্য, পরে আমার সঙ্গে থাকা ছয় হাজার টাকা তাদের দিয়েছি। আমার পেছনে থাকা একটি মাইক্রোবাসে ছিলেন দুই প্রবাসী। তাঁরা মালামাল দিতে দেরি করায় রামদা দিয়ে কুপিয়ে পুরো গাড়ি ভেঙে দেয় এবং প্রবাসীদের সব লুট করে নিয়ে নেয়। ডাকাতেরা মহাসড়কে পিকআপ রেখে ডাকাতি করছিল।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ডাকাতি

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের প্রবাসী মো. আবু হানিফ গত ১৪ জানুয়ারি দুই বছর পর দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রবাসী খালাত ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটিচৌমুহনী এলাকার রাজীব ভূঁইয়া। যে উচ্ছ্বাস নিয়ে তাঁরা দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন, বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তা মিলিয়ে যায় ডাকাতের কবলে পড়ে।

আবু হানিফ জানান, সেদিন ঢাকা থেকে তাঁরা বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কেওঢালা এলাকায় আসামাত্রই র‌্যাব পরিচয়ে একদল লোক তাঁদের বাসটি থামায়। র‌্যাবের পোশাক পরা ওই লোকগুলোর সঙ্গে ছিল ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও পিস্তল। একপর্যায়ে তারা হানিফ ও রাজীবকে বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করে প্রায় চার ঘণ্টা বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডেমরার একটি নির্জন স্থানে তাঁদের গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে লুটে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, বিদেশ থেকে আনা মালামাল, মুঠোফোন, পাসপোর্টসহ সবকিছুই। যার মোট আর্থিক মূল্য ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু লুট হওয়া মালামাল ফেরত পাননি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন শুধু রাতে নয়, দিনেও পুরোপুরি অনিরাপদ উল্লেখ করে আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত কষ্ট করে বিদেশে অর্থ উপার্জন করেছি, কিন্তু ঘরে ফিরেছি শূন্য হাতে। ঘরে আমার দুইটা ছেলে, তাদের জন্য একটা চকলেটও আনতে পারিনি। সেদিন মনে হচ্ছিল প্রাণটা নিয়ে অনেক কষ্টে ঘরে ফিরেছি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতির শিকার আরেকজন কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার ইতালিপ্রবাসী আবদুল কুদ্দুস। তাঁর শ্যালক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্টের কয়েক দিন পরেই আবদুল কুদ্দুস কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকার একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেয় ডাকাত দল। এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে মারধর করে নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকাসহ প্রায় দশ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল লুট করে তাঁকে মহাসড়কের আলেখারচর এলাকায় ফেলে যায়। ঘটনার পর কয়েকবার চেষ্টা করেও থানায় মামলা করতে পারেননি তাঁরা। এর মধ্যে আবদুল কুদ্দুস ইতালি চলে গেছেন।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ

ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আশা

ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ যাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী