এবার গুগলের অ্যাপ ব্যবসার ধরন পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। বিষয়টি হলো অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের শুধু গুগলের অ্যাপ স্টোরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখে অন্যান্য উৎস থেকেও অ্যাপ ডাউনলোড ও ক্রয়ের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এপিক গেমস স্টোর নামের এক অ্যাপ স্টোরের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এতে গুগল প্লে স্টোরের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ হবে। খবর রয়টার্স।
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরের জন্য গুগল তার গ্রাহকদের অ্যাপ থেকে কিছু কেনার সুযোগ বন্ধ করতে পারবে না। সেই সঙ্গে গুগলের প্রতিযোগী অন্যান্য অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার সুযোগ দিতে হবে।
এই রায়ের মধ্য দিয়ে গুগল যে ফোন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে তাদের অ্যাপ আগেই ইনস্টল করে দিত, সেই ব্যবসায়িক রীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আরও একটি বিষয় হলো প্লে স্টোর থেকে যে রাজস্ব আয় হয়, সেই রাজস্ব অন্যান্য অ্যাপ বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
গুগল যথারীতি বলেছে, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে। অর্থাৎ আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের এই রায় যেন কার্যকর না হয়, তা নিশ্চিত করা গুগলের লক্ষ্য।
গুগল বলেছে, আদালতের এই রায়ে এপিক প্লে স্টোর সম্ভবত খুশি হবে তা ঠিক; কিন্তু এই রায়ের ফলে এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যার কারণে মার্কিন ভোক্তা, ডেভেলপার ও ডিভাইস উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম সুইনি সামাজিক মাধ্যমে এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, অ্যাপ স্টোর নিয়ে আদালতের সাম্প্রতিক এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ। এপিক গেম স্টোরসহ অন্যান্য অ্যাপ স্টোর ২০২৫ সালে গুগল প্লেতে যোগ দেবে।
সুইনি আরও বলেন, গুগল যেন এককভাবে কর্তৃত্ব করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে অ্যাপ ও স্টোর নির্মাতাদের হাতে এখন তিন বছর সময় আছে; এর মধ্যে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে।
আদালতের এই রায়ে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমেছে। গতকাল সোমবার এই কোম্পানির শেয়ারের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ১৬৪ দশমিক ৩৯ ডলারে নেমে এসেছে।
রায়ে মার্কিন আদালত বলেছে, এখন গুগল ও এপিকের কাজ হলো এই রায় বাস্তবায়নে তিন সদস্যের কারিগরি কমিটি গঠন করা। এপিক ও গুগলের পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষের কেউ না কেউ থাকতে হবে।
অ্যাপের ব্যবসায় একচেটিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুগল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে নিজেদের প্লে স্টোর এককভাবে ইনস্টল করে রাখে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগীদের অন্যায়ভাবে এই ব্যবসা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়—এই অভিযোগে এপিক ২০২০ সালে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ইন্টারনেটের জগতে আরও অনেক সার্চ ইঞ্জিন বা ওয়েব ব্রাউজার থাকলেও মানুষ গুগল ছাড়া অন্যগুলো তেমন একটা ব্যবহার করে না বললেই চলে। ফলে ইন্টারনেটের জগতে সার্চ ইঞ্জিন বা ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে কিছু খোঁজার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে গুগল। সে জন্যই গুগলে কিছু খোঁজাকে অনেকেই বলেন, গুগল করা। ইংরেজি অভিধানেও অবশ্য গুগল শব্দটিকে ক্রিয়াপদ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এর আগে গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত এক রুলে বলেন, গুগল কার্যত আইনসিদ্ধ একচেটিয়া কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে এবং ইন্টারনেটের জগতে তাদের যে প্রাধান্য, তা ব্যবহার করে গুগল প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২৭৭ পৃষ্ঠার রুলিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেই আদালত বলেছেন, ইন্টারনেটের জগতে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে যা যা করা দরকার, গুগল তার সবই করেছে এবং সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। এরপর কী ঘটে, এখন সেটাই দেখার বিষয়। সেই রুলিং টিকে গেলে মার্কিন সরকার গুগলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে; এমনকি তারা গুগলের মতো বৃহৎ কোম্পানি ভেঙেও দিতে পারে।