দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকানোর দাবিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঘেরাও করেছেন একদল বিনিয়োগকারী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ের সামনে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন। বিএসইসির সামনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে এসব বিনিয়োগকারী বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতেও স্লোগান দেন।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একদল বিনিয়োগকারী গত বুধবার দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকার মতিঝিলে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ করেন। সেই বিক্ষোভ থেকে আজ বিএসইসি অভিমুখে লংমার্চ ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিনিয়োগকারীরা প্রথমে মতিঝিলে ডিএসইর পুরোনো ভবনের সামনে জড়ো হন, পরে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। কয়েক দিন ধরে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে নানা কর্মসূচি ও দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলে আসছে। এদিকে বিক্ষোভকারীদের সংঘটিত করার নেপথ্যে একজন কারসাজিকারকের ঘনিষ্ঠ লোকজনও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়। এতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আজ বিক্ষোভ চলাকালে বিএসইসির নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা যাতে বিএসইসিতে প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য ভেতর থেকে গেটে তালা দিয়ে রাখা হয়। বিক্ষোভ চলার সময়ই অবশ্য শেয়ারবাজার পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ফলে দিনের শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৬৩ পয়েন্ট। আগের দিন বুধবার এই সূচক ১৩২ পয়েন্ট বা সোয়া ২ শতাংশের বেশি কমেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজও লেনদেনের শুরুতে সূচকের পতন দেখা যায়। লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫০ পয়েন্ট পড়ে যায়। এরপর সূচক বাড়তে শুরু করে। এভাবে সূচকের উত্থান দিয়েই শেষ হয় লেনদেন।
সূচক বাড়লেও লেনদেনের গতি কমেছে বাজারে। আজ ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১২৫ কোটি টাকা কম। শুধু তা–ই নয়, গত দুই মাসের ব্যবধানে এটিই ঢাকার বাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে গত ৪ আগস্ট সরকার বদলের আগের দিন ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২০৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। সেই হিসাবে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আজই শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়।
লেনদেন কমার কারণ সম্পর্কে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে শেয়ার কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারই অংশ হিসেবে বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজির দায়ে ৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়। বেনামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলে বেক্সিমকো গ্রুপ এ কারসাজির ঘটনায় জড়িত ছিল বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
কারসাজির ঘটনায় বিএসইসির রেকর্ড পরিমাণ জরিমানা করার পরদিনই বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়। পাশাপাশি বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ও থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের (নগদ লিমিটেড) মালিকানা বদলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মূলত এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানার শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু শেয়ারবাজারে তা ভুল বার্তা ছড়ায়। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, শেয়ারবাজারে অতীতে যেসব অনিয়ম হয়েছে, তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে এখন বিনিয়োগকারীদের। বর্তমান কমিশন কিছু সংস্কার উদ্যোগের পাশাপাশি কারসাজিকারকদের বড় অঙ্কের জরিমানার আওতায় এনেছে। এ ছাড়া একসঙ্গে ২৮ কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এসবের তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে বাজারে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এ কথা সত্য। তবে বিক্ষোভ বা আন্দোলন করে শেয়ারের দাম বাড়ানো বা কমানো যাবে না। শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতার জন্য দরকার সুশাসন। সেটি নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে। তাহলে দীর্ঘমেয়াদি বাজারে সুফল মিলবে।