দ্যা নিউ ভিশন

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১৯:১২

তিন দিনের পোলট্রি মেলা শেষ, হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক সমঝোতা ও আলোচনা

প্রায় ৩০ হাজার ক্রেতা–দর্শনার্থীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ঢাকায় ‘১৩তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক মেলা আজ শনিবার শেষ হয়েছে। এতে ২৭টি দেশের দুই শতাধিক কোম্পানি আট শতাধিক স্টলে তাদের পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা প্রদর্শন করেছে। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, মেলায় অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে খামারি ও উদ্যোক্তাদের প্রচুর ব্যবসায়িক আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিজনেস ডিল তথা ব্যবসায়িক সমঝোতা ও আলোচনা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে পূর্বাচলের বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এ মেলার আয়োজন করে। আয়োজকেরা আশা করছে, আগামী দুই বছরে বেশ কিছু ছোট-বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যা দেশে নিরাপদ ডিম, মুরগি ও ফিড উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। মেলার আয়োজকেরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘শূন্য থেকে শুরু করে দেশের পোলট্রি খাতে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০৫০ সাল নাগাদ এই খাত ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হবে। বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্প হবে দক্ষিণ এশিয়ায় অনুকরণীয়। এমন দিন আসবে, যখন এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোলট্রি শো আমরাই আয়োজন করব।’

মসিউর বলেন, দেশ ও মানুষের প্রয়োজনেই দেশের পোলট্রিশিল্পকে টেকসই করতে হবে। ছোট-বড় সব খামারের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া খামারের নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ‘পোলট্রি রিসাইক্লিং আমাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আমদানিতে বিশেষ ছাড় এবং শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোলট্রিতে আমরা ‘‘নেট জিরো কার্বন’’ ইস্যুতে কাজ করছি। বাংলাদেশের বড় ও মাঝারি পোলট্রি খামারগুলোর রুফটপে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলে কয়েক শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।’

বিপিআইসিসির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, ডিম, মুরগি ও পোলট্রিফিড নিরাপদ করতে হলে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট খামারগুলোর আকার বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র ৫৪ বছরের ব্যবধানে বছরে মাথাপিছু এক কেজি মুরগির মাংস ও ২০ পিস ডিম থেকে বর্তমানে প্রায় ১০ কেজি মুরগির মাংস ও ১৩৫ পিস ডিমের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পেরেছি। ২০৩৫ সাল নাগাদ এ পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’ তিনি আরও বলেন, শুধু প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; সবার জন্য সুষম বণ্টনও নিশ্চিত করতে হবে।

ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রমাণিক বলেন, প্রতিদিন জনপ্রতি একটি করে ডিম খেলে পোলট্রিশিল্পের আকার দ্বিগুণ হবে। তিনি বলেন, মেলাটি মূল শহরের বাইরে অনুষ্ঠিত হলেও পোলট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থী মেলা পরিদর্শন করেছেন। ২০২৭ সালে ১৪তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অনেক দূর এগোতে পারব।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্সটেন্স বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পের অগ্রগতিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে তাঁর সরকার ‘পোল্ট্রিটেক বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাঁর দেশের সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ