বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েক দোকান ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। আর কবে নাগাদ বাজারে সরবরাহ ঠিক হবে, সেটিও জানাতে পারছেন না বিক্রেতারা। এই অবস্থায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও তালতলা এবং মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, গত নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। মাঝের সময়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পরে সরবরাহের সংকট কিছুটা কমেছিল। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে আবার তীব্র হয়েছে এ সংকট।
গতকাল দুপুরে শেওড়াপাড়া বাজারের ৯টি মুদিদোকান ঘুরে মাত্র তিনটিতে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। এই বাজারের মুদি বিক্রেতা আবদুল হাকিম জানান, ‘দোকানে এক লিটারের পাঁচটি ও পাঁচ লিটারের দুইটি সয়াবিনের বোতল আছে। যেসব ক্রেতা আগে থেকে বলে রেখেছেন, তাঁদের কাছেই এগুলো বিক্রি করা হবে। নতুন কাউকে দিতে পারছি না।’ একই অবস্থা দেখা গেছে আরও কয়েকটি বাজারেও।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, পরবর্তী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হবে। এরপর গত রোববার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, আসন্ন পবিত্র রমজান সামনে রেখে বাজারে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভোজ্যতেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই রমজানে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। তবে গতকাল রাজধানীর চারটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটারে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বেড়েছে। তাতে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯০ টাকায়। অথচ বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৭৫ টাকা।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, বোতলজাত সয়াবিনের তুলনায় খোলা সয়াবিনের দাম বেশি। এ অবস্থায় ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বোতলজাত সয়াবিন কম পাচ্ছেন তাঁরা। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খোকন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, ‘কোম্পানির প্রতিনিধিরা দোকানে কোনো তেল সরবরাহ করছেন না। নিকটস্থ পরিবেশকের কাছ থেকে তাঁদের তেল আনতে হয়। সে জন্য তাঁদের আগেই বলে রাখতে হয়। তারপরও সকাল ৯টার মধ্যে না গেলে তেল পাওয়া যায় না। আবার দোকানে তেল না পেলে ক্রেতারা বিরক্ত হন। এ নিয়ে মহা সমস্যায় আছি।’
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে গত সপ্তাহে মুরগির বাড়তি চাহিদা ছিল। এ কারণে মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছিল। সেই দাম আবার কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৭০-৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়।
অন্যদিকে, বাজারে দু-তিনটি শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমায় সেসব পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। যেমন, প্রতিটি ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম আগের তুলনায় ৫-১০ টাকা বেড়েছে। তবে অন্যান্য সবজি আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল প্রতি কেজি শিম মানভেদে ৩০-৬০ টাকা, টমেটো ২৫-৩০ টাকা, বেগুন ৪০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০-৬০ টাকা, শসা ৫০-৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, মুলা ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।