শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও ঋণশোধের জন্য সরকারি নিশ্চয়তার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে (ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ) দেওয়া ঋণের সুদ নির্ধারণ করেছে ১০ শতাংশ। চড়া সুদে আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ১০ শতাংশ সুদ নিয়ে আপত্তি আইসিবির। এ জন্য ঋণের সুদ কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চায় সংস্থাটি।
ঋণের সুদহার কমাতে এখন অর্থ উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় আইসিবি। এ জন্য সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আগামী রোববার বৈঠক করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও বেশি সুদের পুরোনো বাণিজ্যিক ঋণ শোধ করে নিজেদের আর্থিক সক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিলসহায়তা চেয়েছিল আইসিবি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইসিবির পরিবর্তিত পর্ষদ এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ১৩ নভেম্বর আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি প্রদান করে। সেই নিশ্চয়তার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই ঋণ দেওয়ার কথা। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবিকে জানায়, ঋণের সুদহার হবে ১০ শতাংশ। ঋণের মেয়াদ হবে দেড় বছর। কিন্তু চড়া সুদে দেড় বছরের জন্য ঋণ নিয়ে আইসিবির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ জন্য তাঁরা সুদ কমানোর জন্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ কমাতে অপরাগতার কথা জানিয়েছে। এ অবস্থায় আইসিবি অর্থ উপদেষ্টার শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিবির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ শতাংশ সুদ নিয়ে আইসিবি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং পুরোনো ঋণ শোধ করে খুব বেশি লাভবান হবে না। এ জন্য আমরা ঋণের সুদ কমিয়ে ৪ শতাংশ করার অনুরোধ জানিয়েছি। অন্যথায় চড়া সুদের এই ঋণ আইসিবির জন্য একধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমরা সুদ কমাতে এখন অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রোববার এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, আইসিবিকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ নভেম্বর নিশ্চয়তাপত্র ইস্যু করে। এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত ঋণ নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করবে আইসিবি। এই টাকা তারা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও উচ্চ সুদে নেওয়া তহবিল পরিশোধে ব্যবহার করবে। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইসিবির অনুকূলে দেওয়া তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ বা ঋণের ওপর আরোপিত সুদ বা সুদাসল পরিশোধে আইসিবি ব্যর্থ হলে সরকার তা পরিশোধ করবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে যে মুনাফা দেয়, তা থেকে এই ঋণের অপরিশোধিত অংশ বা সুদ সমন্বয় করা যাবে না।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ নিশ্চয়তা দেওয়ার খবরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আস্থা ফিরেছিল। কারণ তারা মনে করেছিল, কম সুদে ঋণ পেলে আইসিবি বাজারে বিনিয়োগ করবে। তাতে বাজারে কিছুটা হলেও গতির সঞ্চার হবে। কিন্তু এখন ১০ শতাংশ সুদে এই ঋণ আদৌ আইসিবি নেবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।