দ্যা নিউ ভিশন

মুডিসের ঋণমান কমানো কিছুটা হতাশার: সোহেল আর কে হোসেন

সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে মুডিস রেটিংস। আন্তর্জাতিক এই ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মুডিসের ঋণমান কমিয়ে দেওয়া কিছুটা হতাশাজনক।

ব্যাংক এশিয়ার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সোহেল আর কে হোসেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হোসেন, অতিরিক্ত এমডি শফিউজ্জামান এবং এ এন এম মাহফুজ। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ জিয়াউল হাসান মোল্লা, এস এম ইকবাল হোছাইন, আলমগীর হোসেন, এস এম আনিসুজ্জামান, আরেকুল আরেফিন ও মীর্জা আজহার আহমদ প্রমুখ।

সোহেল আর কে হোসেন বলেন, ‘মুডিস পরপর দুবার ঋণমান অবনমন করেছে। এটি কিছুটা হতাশাজনক। দেশের আর্থিক খাতের কিছু চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করছি। তবে কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ অবস্থাকে অতিরঞ্জন করে প্রচার করেছে। এটিও মুডিসের র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।’

আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার কথা বলা উচিত বলে মনে করেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি। তিনি বলেন, ‘মুডিসের র‌্যাঙ্কিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতো রেসপন্ড (কাজ) করবে। তবে ব্যাংক খাতে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও কথা বলতে হবে। দেশের ব্যাংক খাতে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই আছে। তবে এখন আমরা এগুলো ঠিক করার একটা সুযোগ পাচ্ছি। দীর্ঘ মেয়াদে সংস্কারেরও সুযোগ পাচ্ছি। এসব কথা বলা প্রয়োজন।’

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে খেলাপি ঋণ নিয়েও কথা বলেন সোহেল আর কে হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের সংস্কার পদক্ষেপের কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এটা ঠিক। তবে গত সাত-আট বছরে সুশাসন না থাকায় যেভাবে টক্সিক (খারাপ) সম্পদ বেড়েই চলেছিল, সেটি বন্ধ হয়েছে। ভবিষ্যতে আর্থিক খাতে আর যেন নিয়ম ভাঙা না হয়, সেটি এখন নীতিনির্ধারকেরা নিশ্চিত করবেন।’

সোহেল আর কে হোসেন আরও বলেন, ‘সুশাসনের অভাবে গত ১০-১৫ বছর যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি আর যেন দেখতে না পাই, সেটি আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্য আমরা (ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ) যা যা করা দরকার, তা করছি। অন্যদেরও একই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

‘২৫ বছরের পথচলায় সুশাসনকে গুরুত্ব’

১৯৯৯ সালের ২৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ব্যাংক এশিয়া। ২৫ বছরের পথচলায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, উদ্ভাবন ও সুশাসনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংক এশিয়ার ১৩৫টি শাখা, ১৫টি উপশাখা, ৫টি ইসলামিক উইন্ডো, ৫ হাজারের বেশি এজেন্ট আউটলেট ও ৫০ হাজারের বেশি মাইক্রো মার্চেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের ১২টি শাখা এবং লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকের দুটি এক্সচেঞ্জ হাউস রয়েছে। ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরেই দেশে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা যাত্রা শুরু করে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হোসেন দেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাংক এশিয়ার অবদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্যাংক এশিয়া গত ২৫ বছরের পথচলায় ব্যাংকিং সেবায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে চলেছে। কৃষি ও এসএমই ঋণ সহজীকরণ, সরকারের সামাজিক সুরক্ষা ভাতা প্রদান দ্রুত করা, ইসলামিক ব্যাংকিং সেবায় ইনকাম শেয়ারিং রেশিও (আইএসআর) মডেল প্রবর্তন, পেয়োনিয়ার পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস চালু করা, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রবর্তন, মাইক্রো মার্চেন্ট কার্যক্রম প্রবর্তন, ভয়েস ব্যাংকিং সেবা চালু করা প্রভৃতি সেবা যুক্ত করেছে ব্যাংক এশিয়া।

সোহেল আর কে হোসেন জানান, শুরু থেকে করপোরেটের ব্যাংকিংয়ের দিকে ব্যাংক এশিয়ার বেশি মনোযোগ ছিল। বর্তমানে ব্যাংকটির করপোরেট ঋণ ৭২ শতাংশ, আর রিটেইল ব্যাংকিং ঋণ ২৮ শতাংশ। তবে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে করপোরেট ও এসএমই ঋণের অনুপাত সমান পর্যায়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যাংকটির। এটি বাস্তবায়িত হলে ১৬-২০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ দেওয়া যাবে এসএমই এবং রিটেইল খাতে।

ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরও বলেন, ‘দেশে বর্তমানে ভালো ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমাদের ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। অনেক বেশি মুনাফা আমাদের দরকার নেই, আমাদের জন্য টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সুশাসন মেনে চলেন এমন গ্রাহক প্রয়োজন। ব্যাংক এশিয়ার আগামীর পথচলায় টেকসই ব্যাংকিং, জলবায়ু পরিবর্তন, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ও সুশাসনের প্রতি নজর থাকবে।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের সবচেয়ে বড় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংক এশিয়ার প্রায় ৫০ হাজার মাইক্রো মার্চেন্ট গ্রাহক রয়েছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। অন্যদিকে ব্যাংকটির দৈনিক টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকার বেশি, যা চার গুণ করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এ ছাড়া করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে গ্রাম এলাকায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা বৃত্তি প্রদান, সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের জন্মান্ধ শিশুদের বিনা মূল্যে চক্ষু অপারেশন ও মা আমিরান হাসপাতাল নির্মাণের মতো কার্যক্রম রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার।

Related News

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সর্বশেষ