সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি আমানত রাখলে সুদ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি আমানতেই বরং সুদ কম। আবার ব্যাংকের ধরনভেদে সুদের হারে তারতম্য রয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন অর্থাৎ সরকারি ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক—এই চার ধরনের ব্যাংকের মধ্যে এখন স্বল্পমেয়াদি আমানতে সবচেয়ে বেশি সুদ বেসরকারি ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বরভিত্তিক সুদহারসংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকে এক বছরের কম মেয়াদি স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ক্ষেত্রে গড় সুদহার ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি মেয়াদি স্থায়ী আমানত ও ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএসের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকে এক বছর মেয়াদি স্থায়ী আমানতের গড় সুদহার ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি মেয়াদের স্থায়ী আমানত ও ডিপিএসের ক্ষেত্রে এই গড় সুদহার ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এক বছরের কম মেয়াদি স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। এক বছরের বেশি মেয়াদের স্থায়ী আমানত ও ডিপিএসের ক্ষেত্রে এই সুদহার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এক বছরের কম মেয়াদি স্থায়ী আমানতের গড় সুদহার ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এক বছরের বেশি মেয়াদের স্থায়ী আমানত ও ডিপিএসের ক্ষেত্রে এই সুদহার ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে সব ধরনের ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি আমানতের গড় সুদহার বেড়েছে। আগস্টে সরকারি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি আমানতের গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি সময়ের এফডিআর ও ডিপিএসের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকে আগস্টে স্বল্পমেয়াদি আমানতের গড় সুদ ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি মেয়াদি আমানতে এই সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে আগস্টে স্বল্পমেয়াদি আমানতের গড় সুদ ছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি মেয়াদের আমানতে এই সুদহার ছিল সোয়া ৫ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে আগস্টে এক বছরের কম মেয়াদি আমানতের গড় সুদ ছিল ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ আর এক বছরের বেশি মেয়াদি আমানতের গড় সুদ ছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি ও বিশেষায়িত মোট ৬১টি ব্যাংকের সেপ্টেম্বরভিত্তিক সুদহারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৪৩, বিদেশি ব্যাংক ৯টি, সরকারি ব্যাংক ৬টি ও বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে ৩টি।
ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদসংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেসব ব্যাংকের তারল্যসংকট বেশি, সেসব ব্যাংক আমানতে বেশি সুদ দিচ্ছে। অর্থাৎ তারল্যসংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলোই মূলত বেশি সুদে আমানতকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। ফলে যাঁরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন, তাঁদের সুদ আয়ের পাশাপাশি আমানতের নিরাপত্তা বা সময়মতো টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, দুর্বল ব্যাংকে বেশি সুদে আমানত রাখার চেয়ে কিছুটা কম সুদে ভালো ব্যাংকে আমানত রাখা আমানতকারীদের জন্য বেশি সুবিধাজনক।
ব্যাংকাররা বলছেন, বেশ কিছু ব্যাংক তারল্যসংকটে ভুগতে থাকায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে তাদের স্বল্পমেয়াদি আমানতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি আমানতে বেশি সুদ দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি বা এক বছরের কম সময়ের স্থায়ী আমানতে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে বেসিক ব্যাংক। বিগত আওয়ামী সরকারের মেয়াদে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর ব্যাপক ঋণ অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এক দশকের বেশি সময় ধরে ধুঁকছে। এ অবস্থায় নিজেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বেশি সুদে স্বল্পমেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাংকটি।
বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আমানতে সবচেয়ে বেশি সুদ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে। ব্যাংকটি এক বছরের কম সময়ের আমানতে সুদ দিচ্ছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর এক বছরের বেশি মেয়াদি আমানতে এই সুদ ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি আমানতে সবচেয়ে বেশি সুদ হাবিব ব্যাংক। ব্যাংকটি এক বছরের কম সময়ের স্থায়ী আমানতে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আর এক বছরের বেশি সময়ের আমানতে সুদ দিচ্ছে ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি আমানতে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটি ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদে এক বছরের কম মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক বছরের বেশি সময়ের অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি আমানতে বেশি সুদ দিচ্ছে এনআরবি ব্যাংক। ব্যাংকটি ১১ দশমিক ০৩ শতাংশ সুদে এক বছরের বেশি মেয়াদি এফডিআর ও ডিপিএস সংগ্রহ করছে আমানতকারীদের কাছ থেকে