কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় শাকসবজি, আদা, হলুদ, মরিচ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও টমেটো, পান, আখসহ প্রায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ১০ লাখ সবজির চারা এবং ৫ একর জমিতে ধানের চারা উৎপাদন করে বিনামূল্যে বন্যাকবলিত কৃষকদের মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
**সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তি**
বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন বন্যা মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন, তখন হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী এম এ ইমরান খান নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর এই আহ্বান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। প্রথমে কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘কৃষি বাজার’ দুই লাখ সবজির চারা বিনা মূল্যে উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের নেট হাউস ও স্থানীয় নার্সারিতে আরও আট লাখ সবজির চারা উৎপাদনের জন্য অর্থ সংগ্রহের প্রচারণা শুরু করেন। পরে পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবক আবেদ চৌধুরীর ‘ফারমারস গ্রিন রেভল্যুশন’ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্টুডেন্টস ইন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রিলেটেড সায়েন্সেসের হাবিপ্রবি শাখার সহযোগিতায় ১২৮০ কেজি ইনব্রীড ধান বীজও পাওয়া যায়।
**স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে চারা উৎপাদন**
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর পাঁচ একর জমিতে ধানের চারা এবং সিডলিং ট্রেতে ১০ লাখ সবজির চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে জমি প্রস্তুতি ও চারা উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখন অন্যান্য অনুষদের শিক্ষার্থীরাও এই কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছেন।
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাসানুর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষকেরা নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছি। যেহেতু কৃষি অনুষদের বাইরের শিক্ষার্থীরাও এখানে কাজ করছে, কিছু চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে কারিগরি দিকেও আমরা সাহায্য করছি। শিক্ষার্থীরা খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কাজে অংশ নিচ্ছে।”
চারা উৎপাদন ও বিতরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে এর উদ্যোক্তা এম এ ইমরান খান বলেন, “বন্যাকবলিত এলাকার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ‘স্বল্প জীবনকালের আমন ধানের চারা’ বিতরণ করব। সরেজমিনে পরিদর্শন করেই কৃষক তালিকা তৈরি করা হবে। স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় কৃষানীদের মধ্যে সবজি চারা বিতরণ করা হবে, যাতে তাঁরা বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি উৎপাদন করতে পারেন।”